Saturday, January 15, 2011
বিআরটিএর বিজ্ঞপ্তি
সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকাগুলোতে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করছে বিআরটিএ। বিজ্ঞাপনের বিষয় সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া পুনর্নির্ধারণ। যারা ঢাকার রাস্তায় চলাফেরা করেন বা চলতে বাধ্য হন, তাদের কাছে এ বিজ্ঞাপন মহামূল্যবান বস্তু। কাজে যাওয়া বা কাজ থেকে ফেরার পথে যাদের প্রতিদিন বাসের মতো গণপরিবহনে উঠতে হয়, তারা জানেন এ বাস বস্তুটি কত দামি। আর রাস্তার ধারে অপেক্ষমাণ যে যাত্রীর পাশে এসে সিএনজি অটোরিকশা তাকে গন্তব্যে পেঁৗছে দিতে রাজি হয় তিনি মহাভাগ্যবান। প্রয়োজনের সময় অটোরিকশা মেলা ভার, মিললেও যাত্রীর পছন্দসই গন্তব্যে যেতে চালককে রাজি করানো কঠিন, ভাগ্যক্রমে চালক রাজি হলেও দামে বনিবনা হওয়া আরও কঠিন ব্যাপার। একটি মেট্রোপলিটন বলে কথিত রাজধানী শহরে গণপরিবহন ব্যবস্থা এত বিশৃঙ্খল হতে পারে তা ভাবতেও কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে রাস্তায় পরিবহনের অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দেখে মনে হয় এক 'সমাধানহীন নাগরিক অসভ্যতার' মধ্যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। এটিকে গড়েপিটে সভ্যতা বানানো কার পক্ষে সম্ভব? একজন নাগরিকের গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা সময় যে দেশে রাস্তায় ব্যয় হয়, সে দেশ উন্নতির আশাই-বা করে কী করে?
অবশ্য ধীরে হলেও কিছু কিছু উদ্যোগ আসছে। সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া পুনর্নির্ধারণ ও মিটার সচল করার উদ্যোগ রাস্তার বিশৃঙ্খলাকে নিয়মে আনতে একটি উদ্যোগ হতে পারে। তবে এটি বাস্তবায়িত হতে হবে। অনিয়মে অভ্যস্ত হতে হতে যাত্রীরা এখন ভুলতেই বসেছেন যে, রাজধানীতে সিএনজি অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব ইত্যাদিতে মিটার নামে একটি ব্যবস্থা আছে। কেউ পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন, ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব বলতে কোনো ব্যবস্থা আছে নাকি? ট্যাক্সিক্যাব নামকাওয়াস্তে আছে। অটোরিকশা প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও আছে এবং তাতে ন্যায্যমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ মূল্য পরিশোধ করেই তবে যাত্রীকে কোথাও যাওয়ার মাশুল গুনতে হয়। চালকরা বলেন, জমা ৭০০ টাকা, কম ভাড়ায় পোষায় না_ তাই তারা যথেচ্ছ ভাড়া আদায়ের লাইসেন্স পেয়ে গেছেন। অটোরিকশার মালিক বলেন, ২-৩ লাখ টাকার গাড়ি তারা ৮-৯ লাখে কিনেছিলেন অনেক বছর আগে, তাই জমা বেশি হওয়াই নিয়ম। এমনিভাবে এ-ওর ওপর দোষ চাপিয়ে এক অব্যবস্থাপনাই নিয়মে পরিণত করতে চলেছেন। যিনি সিএনজি অটোরিকশার দাম ৮-৯ লাখ টাকা করেছেন তিনি লাভের ভাগ আগেই খেয়ে বসে আছেন। তারপর রাস্তায় প্রতিদিনই খেসারত দিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। অবস্থা দেখে মনে হয়, দেখার কেউ নেই, বলার কেউ নেই, প্রতিবিধান করারও কেউ নেই। এবারের বিজ্ঞপ্তির পর পরিস্থিতির কি উন্নতি হবে কেউ বলতে পারে না। কারণ, বিজ্ঞপ্তি তো ছাপা কাগজ, বিজ্ঞপ্তি বাস্তবায়ন করতে হলে ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর হতে হবে। সিএনজি বেঁধে দেওয়া নিয়মে চলছে কি-না তা যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী না দেখে তবে স্বেচ্ছায় নিয়ম কে মানে এ দেশে? বিজ্ঞপ্তি তখন শুধু ছাপা কাগজ। অটোরিকশার মালিকরা জমা বেশি আদায় করছেন কি-না তা যদি না দেখা হয় তবে সিএনজিচালকরাও বিজ্ঞপ্তি মানতে চাইবেন না। ফলে ব্যবস্থাটা চালু করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার বিকল্প নেই। কিন্তু সে সময় কি তাদের হবে? এই যানজট ও বিপুল ভিড় নিয়ন্ত্রণের পর সিএনজিগুলো মিটারে যাচ্ছে কি-না সে প্রশ্ন তাদের মনে উঠবে? নাকি আগের মতোই সিএনজি সিএনজির মতো, রাস্তা রাস্তার মতো, পুলিশ পুলিশের মতো চলতে থাকবে? যে বিপুল অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের জঞ্জাল আমরা তৈরি করেছি তা অপসারণের উদ্যোগ কোথাও থেকে শুরু হবে না তাহলে? কোনো একটা জায়গা থেকে কিন্তু শুরু হওয়া দরকার। বিআরটিএর বিজ্ঞপ্তিটি বাস্তবায়নের মাধ্যমেও সে সূচনা
হতে পারে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment