Sunday, November 21, 2010

তলস্তয়ের মৃত্যুশতবার্ষিকীতে


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তুত হচ্ছি আমরা। কবির গত জন্মদিনে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠানমালা, শেষ হবে আগামী জন্মদিনে। কবি জন্ম নিয়েছেন ১৮৬১ সালের ৭ মে। সে অনুসারে আগামী ২৫ বৈশাখেই তার সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী। কবির জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালন নিয়ে আমরা যতটা উৎসাহী, ততটা বোধহয় তার বিপুল রচনাবলি নিয়ে নয়। নইলে আজ যে শিল্প ও সৌন্দর্যবোধ বঞ্চিত জীবনাচারের রাজত্ব চলছে চারদিকে, তা দেখতে হতো না আমাদের। মেধা ও মননের চর্চা তো বটেই, আমাদের সমাজে সহনশীলতা, সততা ও ঐক্যের আবহও তৈরি হতো যদি কবির রচনাবলির সামান্য শিক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রবেশাধিকার পেত। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন আরও মধুর হতে পারত তার রচনার স্পর্শে। তার বাণীকে ধারণ করতে না পারলেও কবিকে কেন্দ্র করে আতিশয্যের নানা আয়োজনের প্রতি আমাদের উৎসাহ বেশ। তাই হয়তো সুমন তার গানে অনেক বছর আগে বলেছিলেন, প্রাণে গান নেই বুঝি তাই রবিঠাকুর মূর্তি গড়া। সত্যিই আমাদের প্রাণে গান নেই। প্রাণ গান-বঞ্চিত, তাই প্রাণের বাইরে কবির নানা মূর্তি নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। শুধু রবীন্দ্রনাথ কেন, আমাদের প্রধান সাহিত্যিক-শিল্পীদের শিক্ষাকে কি অন্তরে ধারণ করতে পেরেছি আমরা? বোধহয় নয়। যদি তা হতো তবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টির প্রতি আমাদের একটা সহজাত আকর্ষণ তৈরি হতো। রবীন্দ্রনাথকে না হয় আমরা অন্তরের বাইরে পালন করি। কিন্তু পৃথিবীর অন্য সেরা সাহিত্যিকদের তো সেখানেও জায়গা নেই বলে মনে হয়। যেমন গতকাল, ২০ নভেম্বর লেভ তলস্তয়ের মৃত্যুর ১০০ বছর পূর্ণ হলো। গত এক শতকের বেশি সময় ধরে তিনি পৃথিবীর মহত্তম লেখক ও চিন্তক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। অনেকের মতে, তিনি বিশ্বের সেরা ঔপন্যাসিক। কই তাকে নিয়ে তো কোনো আয়োজন চোখে পড়ল না। অথচ বিশ্বের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে তিনি প্রভাবিত করে চলেছেন। তার অনেক রচনা বাংলায় অনূদিত হয়েছে। পাঠকের একটি অংশ এখনও তাকে অবশ্যপাঠ্য মনে করেন। কিন্তু তার মৃত্যুশতবার্ষিকী চলে গেল নীরবে। জানুয়ারিতে চলে গেল আন্তন চেখভের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী। চেখভের মতো মহান লেখকের জন্মবার্ষিকীর এত বড় আয়োজনও আমরা পালন করতে পারলাম না। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তিগুলোর ব্যাপারে আমাদের এমন নীরবতা কিন্তু গর্বের বিষয় নয়। কেননা যে জাতি রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে সে জাতি শিল্পের প্রতি ভালোবাসার নিয়মেই তলস্তয় ও চেখভকেও ভালোবাসতে বাধ্য। ফলে এ প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, সত্যিই কি আমরা রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করছি? নাকি এ আমাদের ভান। যাই হোক, তলস্তয়ের মৃত্যুশতবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি তার প্রতি। তলস্তয়ের মৃত্যুর দিনটি শুধু নয়, তার মৃত্যুর ঘটনাটি বহুকাল পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষকে ভাবিয়েছে। শেষ জীবনে জীবনযাপন পদ্ধতির সঙ্গে বিশ্বাস ও কর্তব্যের মিল নিয়ে সংকটগ্রস্ত হয়েছিলেন তিনি। এ সংকটের কারণে পরিবারের অমতে ঘর ছেড়েছিলেন এই ভূস্বামী। বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন। তার এই ত্যাগই তাকে শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ার মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত করে এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার অমর উপন্যাস-গল্প-প্রবন্ধের মতো তার জীবনও মানুষকে ভাবিয়েছে। নতুন উপলব্ধি ও আবিষ্কারের সামনে দাঁড় করিয়েছে।

No comments:

Post a Comment