Tuesday, November 9, 2010

ঈদের পর ...

শীত আসি আসি করছে। উত্তর থেকে মৃদুমন্দ বাতাস বইতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে, লোকে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গিয়ে সঙ্গে শীতের শুভেচ্ছা নিয়ে ফিরবে। নাগরিকরা যখন শীতের জন্য প্রস্তুত তখন রাজনীতি উল্টো দিকে পাল তুলে বসে আছে। পুরো গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ শীতঘুমে কাটিয়ে শীতের প্রাক্কালে শীতঘুম ভাঙার আয়োজন করছে বিরোধী দল। তাদের পক্ষ থেকে অকালে জাগরণের এই ইঙ্গিত থেকে কেউ কেউ ধারণা করছেন, ঈদের পর সত্যিই বোধহয় রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে উঠবে। কিন্তু আমাদের রাজনীতির নিজস্ব কিছু ঋতুবৈচিত্র্য আছে। গরমে মানুষ রাস্তায় নামতে পছন্দ করে না। ফলে গরমের দিনে একান্ত জরুরি না হলে আন্দোলন জমানো কঠিন। বর্ষাতেও তথৈবচ। পানি আর কাদা ভেঙে রাস্তায় নামার ধকল কে আর সইবে? তাই বর্ষাও বাদ। থাকে শুধু হেমন্ত আর বসন্ত। এই সময়ে আন্দোলন জমাতে না পারলে আবার অপেক্ষা পরের হেমন্তের জন্য। ইংরেজি হিসাবে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি বড়জোর মার্চ পর্যন্ত বাঙালির আন্দোলনের মরসুম। শুধু ঋতু কেন, অন্য হিসাবও আছে। যেমন রমজানের আগে কিংবা রমজান মাসে আন্দোলন হবে না। ঈদের আগে নয়। তবে যে কোনো ঈদের পরে হতে পারে। ঈদের ছুটির লাগোয়া কয়টা দিন হরতাল দিলে লোকে এমনকি অভিনন্দনও জানাতে পারে। কিন্তু লোকে যখন পুরো মুডে থাকে, কাজে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকে, তখন হরতাল-ধর্মঘট ইদানীং আর পছন্দ করে না। হরতাল-ধর্মঘট তো বটেই ঢাকা শহরে এখন ছোটখাটো মিছিল করারও জো নেই। একেকটা ছোট মিছিলে ঘণ্টা তিন-চারেকের জ্যাম পড়ে যায়। ফলে পথচারীরা যদি ঘুণাক্ষরে জানতে পারেন কার মিছিল তবে তার জনপ্রিয়তা বাসে বসিয়েই কমিয়ে দেন। সমাবেশ হলে তো কথাই নেই। সরকারি-বেসরকারি যে নেতাই হোক, সমাবেশ করলে ওইদিন তার জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। ফলে সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের জন্যই সহজ কর্মসূচি হলো রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন। আর তাতেও যদি বাধা আসে তবে টিভিতে ক্যামেরা আন্দোলনই একমাত্র উপায়। তাই ভাবছি, ঈদের পর আন্দোলনের কথা যে বলা হচ্ছে সেটা হবে কী করে? তর্কের খাতিরে ধরেই নেওয়া হলো, আন্দোলন হবে। মিছিল-সমাবেশ-হরতালে মুখর হয়ে উঠবে রাজধানীর পথঘাট। বিরোধীদের মাঠ থেকে হটাতে পুলিশ নামবে, পুলিশ না পারলে রাজনৈতিক কর্মীরা নেমে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে। কিন্তু লোকে সেই আন্দোলনে-সংঘর্ষে খুশি হবে তো? লোকে বলে, আমাদের ভোজ্য তালিকার শীর্ষে নাকি লাউ। লাউ খেতে খেতে ক্লান্ত হলে বিকল্প ব্যবস্থা কদু। আর কদু খেতে ভালো না লাগলে লাউ। আমরা কখনও কদুর ওপর রাগ করে লাউ খাই, অথবা লাউয়ের ওপর রাগ করে কদু খাই। কখনও মনে হয় লাউ ভালো, কখনও কদু। অবশ্য সরকারের শেষ দিক হলে কথা ছিল। পাঁচ বছর লাউ খেয়ে ক্লান্ত হলে লোকে বলত, এবার কদু আনো। ফলে কদু আনার ছলে শেষ দিকে কিছু আন্দোলন রেওয়াজমতো জমতেও পারত। তাই বলে এখনই? ঈদের পরেই? অবশ্য দুর্জনরা বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধী দলে থাকলে অমন করে করেই সময় কাটায়। সংসদে যাওয়ার নামগন্ধ নেই। মানুষের দাবি-দাওয়া নিয়ে চিন্তা নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। আবার একটা বোঝাপড়ার বোধ আছে। সরকার যখন ক্ষমতায় আছে তখন পাঁচ বছর তো ক্ষমতায় থাকবেই। ফলে সময় কাটানোর একটা উপায় দরকার। সেটা কী হতে পারে। নিজেদের জানানও দিতে হবে, পাঁচটা বছর কাটাতেও হবে। ফলে একেকটা লক্ষ্য তৈরি করার উদ্যোগ। তারই অংশ ঈদের পর আন্দোলন, রোজার পর কঠোর কর্মসূচি, শীতের পর দেশব্যাপী কর্মসূচি, গ্রীষ্মের পর সরকার পতন। রাজনীতিতে সময় এইভাবেই কাটে। ফলে চিন্তার কিছু নেই। ঈদের পর কিছু হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু সত্যিই যদি বিরোধী দল রাজনীতির ময়দানে উষ্ণ হাওয়ার ব্যবস্থা করতে চায়। আগের মতো সংঘর্ষ-সংঘাতে ফিরিয়া যাইতে চায় আর যদি সরকার পক্ষ তাতে তাল দিয়ে গরম বাড়িয়ে তোলে, তবে জনগণের কপালে দুঃখ আছে। শহরে তাৎক্ষণিক বিপত্তির কথা ভুলে গেলেও সুদূরপ্রসারী দুঃখের কথা তো ভুললে চলবে না।

No comments:

Post a Comment