উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দিয়ে রীতিমতো সাড়া
ফেলে দিয়েছে ইকুয়েডর। বিশ্ব এখন মোটামুটিভাবে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। এক
মেরুর এই বিশ্বে বড় রাষ্ট্রগুলোও যুক্তরাষ্ট্রকে সমঝে চলে। গুরুতর ভিন্নমত
হলে নানা ছল করে কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রকে তা বোঝাবার ব্যবস্থা হয়।
আলাপ-আলোচনা করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা সবার। এমন অবস্থায় চীন নয়,
ব্রাজিল নয়, ভারত নয়; ইউরোপের কোনো দেশ নয়_ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শত্রু
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দিল ইকুয়েডর। ইকুয়েডর চীনের মতো উদীয়মান
অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি নয়। ইউরোপের মতো উদারপন্থিও নয়। গণতান্ত্রিক
ঐতিহ্যে যে খুব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শখ দেশটির_ তাও নয়। তবু তিন কূল হারানো
ডিজিটাল বিপ্লবীকে আশ্রয় দেওয়ার কাজটি তারাই করল। অ্যাসাঞ্জ ছিলেন
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। অবস্থা বেগতিক দেখে অস্ট্রেলিয়া তাকে ত্যাজ্য করেছে।
যুক্তরাজ্য প্রথমে কিছুটা উদারতা দেখালেও শেষ পর্যন্ত তাকে সুইডেনের কাছে
হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। সুইডেনে ধর্ষণের দায়ে তার বিচার হওয়ার
কথা ছিল। অ্যাসাঞ্জ অবশ্য বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। যা হওয়ার সমঝোতার
ভিত্তিতে হয়েছিল। স্রেফ ষড়যন্ত্র করেই তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে
যুক্তরাষ্ট্রেও নানা অভিযোগ শাসানো হচ্ছিল। এমন হতেই পারত যে, সুইডেন হয়ে
তার গন্তব্য হতো যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার। বাদ সাধল ইকুয়েডর। প্রশান্ত
মহাসাগরের তীরে পেরু আর কলম্বিয়ার সীমান্তের দেশটি। এ দেশের মার্কিন
বিরোধিতার ঐতিহ্য দীর্ঘ। এজন্য মার্কিনিরাও কম দায়ী নয়। দক্ষিণ আমেরিকার
সামরিক স্বৈরাচারদের মাধ্যমে একের পর এক দেশে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে
নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বহু বছর ধরে জনগণ সে
স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতান্ত্রিক সরকার এনেছে। আর এ সরকারগুলো
হয়েছে স্বভাবের দিক থেকে পুরো মার্কিনবিরোধী। লাতিন আমেরিকায় বিভিন্ন দেশ
মিলে তৈরি করেছে অ্যান্টি অ্যামেরিকান জোট_ অ্যালবা। এরা উঠতে-বসতে
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নানা কথা বলে। নামে অবশ্য এ দেশগুলোও আমেরিকা।
কিন্তু কাজে অ্যান্টি আমেরিকা। তবে এই অ্যান্টি আমেরিকানদের বিরুদ্ধে
যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতাও অব্যাহত। অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দেওয়া নিয়েই সপ্তকাণ্ড
রচিত হয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও স্বাধীন মতপ্রকাশের বিশাল ধ্বজাধারী হলেও
ইউরোপের দেশগুলো অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে চুপ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের
ভিন্নমতাবলম্বীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে যারা চ্যাম্পিয়ন; অ্যাসাঞ্জের
ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্যই নেই। আশ্রয় দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রও কম যায় না।
একসময় ভিন্নমতাবলম্বী রাশিয়ানদের আশ্রয় দিয়েছে তারা প্রচুর। এখন চীনের
ভিন্ন মতাবলম্বীদের নিয়ে তাদের আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু যেই তাদের এক
ভিন্নমতাবলম্বীকে আশ্রয় দিতে গেল ইকুয়েডর, অমনি তার সমালোচনা শুরু হলো। বলা
হলো, ন্যায়বিচারের পথে বাধা দেওয়া হলো। ইকুয়েডর স্রেফ পাগলামি করছে।
ইকুয়েডরের লন্ডন দূতাবাসে অভিযান চালানোর ভয়ও দেখানো হয়েছে।
এখন বলা হচ্ছে, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া নির্বাচনে জয়ের জন্য অ্যাসাঞ্জ কার্ড ব্যবহার করতে চাইছেন। বিশ্বে একটা ভাবমূর্তি গড়ার চিন্তাও নাকি তার আছে। সব মিলিয়ে এক গুরুতর পরিস্থিতি। অ্যাসাঞ্জ প্রসঙ্গে ইকুয়েডরের পদক্ষেপকে কিন্তু বিশ্বের নাগরিকদের আলাদা করে ধন্যবাদ দিতেই হবে।
এই বিশ্বে মতাদর্শের লড়াইয়ে শেষ কথা বলে কিছু নেই। অ্যাসাঞ্জ যে শেষ পর্যন্ত একটি দেশে আশ্রয় পেয়েছেন_ এটি আশ্বস্ত হওয়ার মতো বিষয়। পৃথিবী অনন্ত সম্ভাবনাময়। এর আশ্রয়ও অনন্ত। রাজনীতির জটিল হিসাবনিকাশের বাইরে এই সত্যটাও জানা থাকা দরকার। এই সামান্য সত্যটা জানাবার জন্যও তো
ইকুয়েডরকে ধন্যবাদ জানানো
যেতে পারে।
এখন বলা হচ্ছে, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া নির্বাচনে জয়ের জন্য অ্যাসাঞ্জ কার্ড ব্যবহার করতে চাইছেন। বিশ্বে একটা ভাবমূর্তি গড়ার চিন্তাও নাকি তার আছে। সব মিলিয়ে এক গুরুতর পরিস্থিতি। অ্যাসাঞ্জ প্রসঙ্গে ইকুয়েডরের পদক্ষেপকে কিন্তু বিশ্বের নাগরিকদের আলাদা করে ধন্যবাদ দিতেই হবে।
এই বিশ্বে মতাদর্শের লড়াইয়ে শেষ কথা বলে কিছু নেই। অ্যাসাঞ্জ যে শেষ পর্যন্ত একটি দেশে আশ্রয় পেয়েছেন_ এটি আশ্বস্ত হওয়ার মতো বিষয়। পৃথিবী অনন্ত সম্ভাবনাময়। এর আশ্রয়ও অনন্ত। রাজনীতির জটিল হিসাবনিকাশের বাইরে এই সত্যটাও জানা থাকা দরকার। এই সামান্য সত্যটা জানাবার জন্যও তো
ইকুয়েডরকে ধন্যবাদ জানানো
যেতে পারে।
No comments:
Post a Comment