নরসিংদীর ঘটনাবলি সকলের জানা। বিচারক মো. ইমান আলী শেখ আদালত প্রাঙ্গণে
ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দেন গেটে পাহারারত পুলিশ সদস্যরা। বিচারক তার পরিচয়
জানান। তবুও তার পরিচয়পত্র দেখানোর জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন তারা। আবারও
পরিচয় দিলে পুলিশ সদস্যরা বিচারককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। মারধর করে
আহত করেন তাকে। যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নিই যে, পুলিশ সদস্যরা কর্তব্যে
অতিশয় মনোযোগী। কাউকেই তারা পরিচয়পত্র ছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে
দিচ্ছিলেন না। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা ওই আদালতে
কর্মরত বিচারককে চিনবে না_ এটি কী করে মানা যায়? আদালত প্রাঙ্গণের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যেমন তাদের, তেমনি বিচারকদের প্রতি সম্মান
প্রদর্শনও তাদের দায়িত্ব। ধরে নেওয়া গেল, কোনো এক রহস্যময় কারণে বিচারককে
তারা চেনেননি। তবে পরিচয় দেওয়ার পর তাকে সম্মান প্রদর্শন করে পথ ছেড়ে দেওয়া
হলো না কেন? একাধিকবার পরিচয় দেওয়ার পর যখন পুলিশ সদস্যরা বিচারকের ওপর
হামলে পড়লেন তখন তাদের গর্হিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর সন্দেহের অবকাশ থাকে
না। বস্তুত একজন সম্মানিত বিচারককে তারা এভাবে অপমান করতে পারেন না, এমনকি
কোনো সাধারণ নাগরিকের বেলাতেও এমন আচরণ করার অধিকার তাদের নেই। উচ্ছৃঙ্খল
জনতা যদি কোনোভাবে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে পুলিশের
করণীয় থাকে। কিন্তু একা একজন ব্যক্তিকে ঠেকাতে বল প্রয়োগের উদাহরণ
কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। অথচ এমন অন্যায্য বল প্রয়োগের ঘটনা
অহরহই ঘটে চলেছে। অবশ্য নরসিংদীর বিচারক মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে, দায়ী
পুলিশ সদস্যদের বিচারও চলছে। সে ঘটনার রেশ ফুরাতে না ফুরাতেই পুলিশের আরেক
কর্মকর্তা হুমকি দিলেন জজকে। বরিশালের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল
কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন তার স্ত্রী। অপরাধ_ তিনি যৌতুক
দাবি করেছেন। গুরুতর অপরাধ সন্দেহ নেই। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রত্যাশিত কাজ
করেছেন বিচারক মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার। অভিযোগ গঠন করে আবুল কালাম
আজাদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন তিনি। এতে
ক্ষেপে গেছেন এএসপি। তিনি বিচারককে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
বিস্ময়কর ঘটনা সন্দেহ নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা কী করে
একজন বিচারককে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিতে পারেন? পুলিশ সদস্যরা যদি আদালত
প্রাঙ্গণে একজন বিচারকের ওপর হামলা করতে পারেন তাহলে একজন এএসপি নিশ্চয়ই
বিচারককে বদলি করে দেওয়ার মতো ক্ষমতাও রাখতে পারেন। আর এ অবৈধ ক্ষমতা যার
থাকে তিনি স্ত্রীর কাছে যৌতুকও দাবি করতে পারেন। স্ত্রী বিচারপ্রার্থী হলে
তাকে অপহরণের হুমকিও দিতে পারেন। উদাহরণগুলো ভালো নয়। আমরা নিশ্চয়ই বলব
না, পুলিশ সদস্যরা সবাই এভাবে এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে নিজেদের ক্ষমতা
দেখাচ্ছেন। নিয়মানুবর্তিতার তোয়াক্কা করছেন না। ঊর্ধ্বতন বলে বিবেচিত
সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিও তারা সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। একটি-দুটি
ঘটনায় তা বলা যায় না। কিন্তু একের পর এক এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে কিন্তু এক সময়
বলতে হবে। সে সময় যাতে না আসে এ জন্য এখনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সচেতন
হতে হবে। অপমান, মারধর ইত্যাদি হয়তো সাধারণ নাগরিকদের গা সওয়া হয়ে গেছে।
কিন্তু বিচারকদের প্রতি অন্তত তারা প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শন করুক। দায়িত্ব
পালনের কারণে বিচারককে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হুমকি দিলে আইনের শাসন এবং
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ঝুলিতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে কি?
No comments:
Post a Comment