কথায় আছে, সস্তার তিন অবস্থা। কথায় থাকলেও আমরা ঠিক জানি না তিন অবস্থা কী
কী? অনুমান করি, সস্তা জিনিস গুণে-মানে এমনকি পরিমাণেও কমতি থাকবে। তবে
বাজারে গিয়ে সস্তা জিনিসের কথা মনে হওয়ার জো নেই। কারণ এখন সবই দুর্মূল্য।
মানহীন, ভেজাল, রাসায়নিক মিশ্রিত সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। তাই বাজারের
প্রসঙ্গে সস্তা শব্দটি ইতিমধ্যেই তামাদি হয়ে উঠেছে। বরং রাস্তার প্রসঙ্গে
এখন তিন অবস্থার প্রস্তাব করা যেতে পারে। ঢাকার বাইরের রাস্তা তো বটেই,
ঢাকার রাস্তাঘাটের অবস্থাও এখন বেহাল। তাই বলা যায়, রাস্তার তিন অবস্থা।
কিছুদিন আগে ঢাকার মূল সড়কগুলোর পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় ছিল। কিন্তু
নানামুখী বৃহৎ ও ক্ষুদ্র উন্নয়ন কার্যক্রমে রাস্তার পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে
উঠেছে। কোথাও ফ্লাইওভারের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি, কোথাও স্যুয়ারেজ পাইপ বসানোর
খোঁড়াখুঁড়ি, কোথাও তার বসানোর খোঁড়াখুঁড়ি। সবই উন্নয়ন কার্যক্রম। উন্নয়নের
জন্য খনন খুব দরকারি। কিন্তু খোঁড়া রাস্তাকে আগের মতো চলাচলযোগ্য করার কেউ
নেই। ফলে বর্ষায় সেগুলো রীতিমতো রুক্ষ ও কর্কশ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর মূল
সড়কগুলোতে বেরোলে এই কর্কশ বাস্তবতার মুখে পড়তে হবে। মূল সড়ক থেকে গলিতে
ঢুকলে অন্য বাস্তবতা। গলি বা ছোট রাস্তার দায়িত্ব কার, কে জানে! অনেকগুলোই
ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় একেবারে। আর অধিকাংশই এখন ভেঙেচুরে শেষ। ছোটখাটো গর্ত
নয়, রাস্তার ভাঙন বড় বড় গর্ত সৃষ্টি করেছে। ভয়াবহতায় এগুলো ম্যানহোলের চেয়ে
কম নয়, বরং একটু বেশিই। কোনো কোনো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাতেও অবশ্য এখন
এমন গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছোট-বড় রাস্তার এসব গর্তে ট্রাক থেকে রিকশা
সবই হেলে পড়ছে। হেলে পড়লেও রক্ষা নেই_ বর্ষা বলে নোংরা জল-কাদায় মাখামাখি
হতে হচ্ছে পথচারীদের। বস্তুত গাড়িতে চলাফেরা করুন, কি রিকশায়_ প্রত্যেকের
প্রতিদিনের চলাফেরার পথে উন্নয়ন কার্যক্রমে একটি-দুটি, আর অনুন্নয়ন
কার্যক্রমের একটি-দুটি রাস্তার দেখা মিলবেই। নিত্যকার এ দুর্ঘট দেখে কীভাবে
এড়িয়ে যান দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সেটিই প্রশ্ন। বৃষ্টির মৌসুমে
পত্রপত্রিকায় রাস্তার তিন অবস্থার নানা ছবি ছাপা হচ্ছে, তবু সাড়া মিলছে না।
কেউ কেউ পরিহাস করে বলছেন, কর্তাব্যক্তিরা বড় স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার পথে
এগোচ্ছেন। হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা যখন মাথায় থাকে তখন বড় আইডিয়া
মাথায় ঘোরে। ছোটখাটো গর্ত তখন চোখে পড়লেও হৃদয়ে পশে না। সত্যিই তো, রাস্তা
ঠিক করার দায়িত্ব যাদের তারা তো বড় স্বপ্ন নিয়ে ব্যস্ত। ফ্লাইওভার, পাতাল
রেল, উড়ালপথ, বড় বড় সেতু, চার লেন মহাসড়ক। জগতের এই আনন্দযজ্ঞে ছোট রাস্তার
কথা ভাববার সময় কোথায়? বড় রাস্তার ছোট গর্তের কথাই-বা কে ভাববে! তাই হয়তো
নিয়তির মতো মেনে নিয়েছেন সবাই। কোথাও দাবি উঠছে না, মানুষ কষ্ট সয়ে
এধার-ওধার করে রাস্তা পেরোচ্ছেন। গর্তে পড়ে জলকাদা মেখে চারপাশে তাকাচ্ছেন,
কেউ কি দেখে ফেলল? মানসম্মানের প্রশ্ন। কেউ না দেখলে ঠিকই আছে। গর্ত থাকলে
মানুষ. গাড়ি-ঘোড়া সবই পড়তে পারে। রাস্তা সারাবার আইডিয়া আর কারও মাথায়
আসছে না। অবশ্য এর জন্য আইডিয়ার বিশেষ প্রয়োজন নেই। কিছু বরাদ্দ দিয়ে কাজ
ভাগবাটোয়ারা করে দিলেই হয়। কিন্তু বরাদ্দ কি আছে? বরাদ্দের প্রশ্ন ওঠাতেই
হবে। কেননা, গতবার ঈদের সময় বেহাল রাস্তা দিয়ে যখন লোকেরা বাড়ি ফিরতে
পারছিলেন না তখন যোগাযোগমন্ত্রী বলেছিলেন বরাদ্দ নেই। সে নিয়ে কত কথা
কাটাকাটি হলো! এবার বরাদ্দ আছে কি-না খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার। যুক্তি অনুসারে
বরাদ্দ থাকার কথা, রাস্তা খোঁড়ার জন্য যদি বরাদ্দ থাকে তবে খোঁড়া জায়গা
মেরামতের বরাদ্দ নিশ্চয়ই পরের বছরের বাজেটে থাকবে না। তবে খোঁড়া মেরামতের
কিংবা গর্ত মেরামতের বরাদ্দ না-ও থাকতে পারে। থাকবেই যদি তবে বরাদ্দ ব্যয়ের
চিন্তা কারও মাথায় আসবে না কেন?
No comments:
Post a Comment