বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে আজ কার্তিকের ২৭। সন ১৪১৮। অতীতের হাজারো
কার্তিকের মতো এ কার্তিকেরও বিশেষত্ব নেই। বিশেষত্ব একেবারেই নেই তা নয়_
সাম্প্রতিক তীব্র তাপদাহের পর আবহাওয়া এখন অনেকটাই সহনীয়। কার্তিকের
নবান্নের দেশে এখন শীতের আমেজ। গ্রামে ইতিমধ্যে শীত পড়ে গেছে। কার্বনপ্রবণ
উষ্ণ শহুরে এলাকাগুলোতেও এখন হিমেল উত্তুরে হাওয়ার রেশ। সংখ্যাতত্ত্বের দিক
থেকে ২৭ কার্তিক ১৪১৮'র বিশেষ গুরুত্ব থাকার কথা নয়। বাঙালির জীবনে
গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব গণনা, কুষ্ঠি বিচার, মঙ্গল-অমঙ্গল নির্ধারণ এখনও
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারেই হয়। তবে বাংলা ক্যালেন্ডারের দাপট এখন সীমিত
পর্যায়ে। জীবনের বড় জায়গাজুড়ে এখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের দাপট। এ
ক্যালেন্ডারের ভালো-মন্দ, গ্রহ-নক্ষত্র এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরই অংশ।
কেউ কেউ মনে করেন, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস
হবে। অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, আগ্নেয়গিরি, ঝঞ্ঝা পৃথিবীতে আকুল করে
তুলে শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাবে। এ নিয়ে বই লেখা হয়েছে,
সিনেমাও তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশেও কেউ কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করছেন। এ
ক্যালেন্ডারের সংখ্যাতত্ত্ব এখন অনেক মানুষের বিশ্বাসের ওপর প্রভাব বিস্তার
করেছে। যেমন ঘটেছে ২০১১ সালের ৩১৫তম দিনটিকে নিয়ে। বছর শেষ হতে বাকি মাত্র
৫০ দিন। অর্থাৎ পৃথিবী ধ্বংসের বহুল প্রচারিত বছরটি এখনও খানিক দূরে।
কিন্তু ১১/১১/১১-তে এসে বিশ্বব্যাপী গোল বেধেছে। সারা পৃথিবীতে দিনটি নিয়ে
নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। জল্পনার ঢেউ এসে লেগেছে আমাদের দেশেও। কোনো
কোনো ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, ২০১২ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না_ ১১/১১/১১
অর্থাৎ আজকেই পৃথিবীর শেষ দিন। শুক্রবার হওয়ায় এ আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে গেছে।
অবশ্য পৃথিবী ধ্বংসের মতটা তত প্রচার পায়নি। গুরুত্ব হয়েছে বেশ কিছু
ইতিবাচক ব্যাপার। ১১ সংখ্যাটি বহু মানুষের কাছে সৌভাগ্যের সূচক। আর আজ তো
ক্যালেন্ডারে ১১'র আধিপত্য। পুরো ১০০ বছর পর এমন এগারোময় দিন এলো। ১৯১১
সালে এমনকি ১৮১১ সালেও এমন দিন এসেছিল। আগামী ১০০ বছর পরপর এমন দিন আসতেই
থাকবে। কিন্তু মানুষের জীবনের জন্য ১০০ বছর এখনও লম্বা সময়। তাই অনেকের
ভাগ্যেই তিনটা ১১ দেখার ভাগ্য হয় না। যাদের হয়েছে তারা দিনটিকে স্মরণীয় করে
রাখতে চাইছেন। সৌভাগ্যের দিন হিসেবে অনেকে চাইছেন এ দিনে বিয়ে করতে।
গর্ভবতীরা মা হতে চাইছেন এ দিনটিতে। পৃথিবীর অনেক স্থানে রীতিমতো বিয়ে আর
সন্তান প্রসবের বিপুল প্রস্তুতি চলছে। সবার নজর বিভিন্ন অদ্ভুত ঘটনার দিকে।
যেমন খবর মিলেছে এক জোড়া যমজ শিশু আজকেই ১১ বছরে পড়তে যাচ্ছে। তাদের জীবনে
১১ বিশেষ প্রসঙ্গ হয়ে আসছে। ভারতে বাজিকররা ব্যস্ত অনাগত এক শিশুকে নিয়ে।
অমিতাভ বচ্চনের নাতি, অভিষেক আর ঐশ্বরিয়ার যমজ কন্যার জন্ম হওয়ার কথা নাকি
১১ নভেম্বর। এ নিয়ে বাজিকররা কোটি কোটি টাকা ইতিমধ্যে লগি্ন করে ফেলেছেন।
১১ উদ্যাপনের পেছনে মানুষের নির্ভেজাল আনন্দ উপভোগের আয়োজন আছে সত্য,
কিন্তু সঙ্গে আছে অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারেরও নানা প্রভাব। আর এ
কুসংস্কারগুলো তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবে পুরো পৃথিবীতেই ছড়িয়েছে। ফলে পৃথিবী
ধ্বংস হওয়ার মতো বড় ঘটনা না ঘটলেও ছোটখাটো কিছু অঘটন যে ঘটবে তা বলাই
বাহুল্য। আজ যা ঘটবে তা আগামীকালের সংবাদপত্রে নিশ্চয় আমরা জানব। কিন্তু
১৯১১ সালের ১১ নভেম্বর কী ঘটেছিল তা জেনে নেওয়া যেতে পারে। তখন পৃথিবী এত
কানেকটেড ছিল না। ফলে সারা পৃথিবীর কোথায় কী ঘটেছিল তা জেনে নেওয়া কঠিন।
এটুকু জানা যায়, এদিনে যুক্তরাষ্ট্রে মিড-ওয়েস্টার্ন রাজ্যগুলোতে তাপমাত্রা
বিকেলে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছিল আর রাতে সর্বনিম্ন হয়েছিল। খুব অবাক করার
ব্যাপার বটে। এবার তেমন অবাক করার ব্যাপার ঘটবে কি? পৃথিবীর জন্য শুভ ও
সুন্দর কিছু ঘটুক, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিবাহ ও সন্তান জন্মদানের নানা
উদ্যোগের মধ্য দিয়ে প্রিয় পৃথিবীর কল্যাণই কামনা করছি এবং সেটাই আপাতত
সুখবর।
No comments:
Post a Comment