কিঁউ কি সাস ভি কাভি বহু থি'_ এই হিন্দি বাক্যটির অর্থ 'কেননা শাশুড়িও
কোনো এক সময় বউ ছিলেন।' হিন্দি এই বাক্যটি রীতিমতো একটি বাগ্ধারায় পরিণত
হয়েছে একটি টিভি সিরিয়ালের কল্যাণে। সিরিয়ালের নাম 'কিঁউ কি সাস ভি কাভি
বহু থি'। স্টার প্লাসে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বকালের সেরা দশটি
অনুষ্ঠানের প্রথমটি এই সিরিয়াল। শুধু তাই নয়, এশিয়ার সবচেয়ে বেশি দেখা ও
সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পাওয়া সোপ অপেরাও এটি। হিন্দি ভাষায় প্রচারিত এই
সিরিয়ালটি প্রযোজনা করেছিল একতা কাপুর ও শোভা কাপুরের বালাজি টেলিফিল্মস।
২০০০-০৮ পর্যন্ত ৮ বছরে এর এক হাজার ৮৩০টি পর্ব প্রচারিত হয়েছিল। পর্বগুলো
পরিচালনা করেছেন ২০ জনেরও বেশি পরিচালক। সিরিয়ালটিতে একটি পরিবারের পাঁচ
প্রজন্মের ইতিহাস দেখানো হয়েছে। গৃহবিবাদ, গৃহদাহ ও গৃহদুর্ঘটই এই
সিরিয়ালের বিষয়। তবে মূল থিম অবশ্যই বউ-শাশুড়ি সম্পর্ক। সত্য যে,
উপমহাদেশের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে প্রত্যেক শাশুড়িই একদিন নববধূ হিসেবে
স্বামীর ঘরে আসেন। শাশুড়ির সঙ্গ পান, তার কাছে সংসারের প্রয়োজনীয় দীক্ষাও
নেন। আবার গৃহের কর্তৃত্ব নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে বউয়ের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের
কাহিনীও আছে। এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে একদিন নববধূও শাশুড়ি হন।
উপমহাদেশের নারীদের এই রূপান্তর বহু বছর ধরে চলছে। দায়িত্বের বণ্টনও নতুন
কিছু নয়। তারপরও পরিবারগুলোতে বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব খুব আলোচিত বিষয়। আলোচিত
শুধু নয়, রীতিমতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এ এমনই চাঞ্চল্যকর যে, এ নিয়ে
নাটক-সিনেমা হলে তা জনপ্রিয় হবেই এটা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়। কিঁউ কি
সাস ভির সাফল্যের পেছনে খুব গূঢ় রহস্য খোঁজার দরকার নেই বলেই মনে হয়।
ভারতের মতো বাংলাদেশেও গৃহবধূরা প্রতি সন্ধ্যায় পরম আগ্রহে স্টার খুলে
বসেছেন সোপ অপেরাটি দেখার জন্য। শাশুড়িরা যেমন গৃহবধূরাও তেমন নিজেদের
পছন্দের বিষয়টি সেখানে পেয়েছেন। শুধু এই সিরিয়াল নয়, বহু হিন্দি সিরিয়ালের
সাফল্যের মূল সূত্রও ওই গৃহবিবাদ। কেউ কেউ বলেন, হিন্দি সিরিয়ালের গৃহবিবাদ
আমাদের দেশে গৃহবিবাদকে উস্কে দিচ্ছে। সরাসরি হয়তো দোষ দেওয়া যাবে না
এভাবে। কিন্তু পরোক্ষে হলেও কিছু প্রভাব তো পড়ছে। ঈদের বাজারে গেলে মেয়েদের
পোশাক-আশাক যত দেখা যায় তার বেশিরভাগই হিন্দি সিরিয়াল বা সিনেমা প্রভাবিত।
শুধু মেয়েদের পোশাক কেন? ছেলেদের অজস্র পোশাক বাজারজাত হচ্ছে যা শুধু
হিন্দি সিরিয়ালের চরিত্রদেরই পরতে দেখা যায়। সিরিয়ালগুলোতে যেমন দু'দিন
পরপর আনন্দ-আয়োজন লেগে থাকে, তাতে সেখানকার চরিত্রদের নানা রকম শেরওয়ানি,
পাঞ্জাবি, দোপাট্টা, চুড়িদার পরতে হয় বটে। কিন্তু সিরিয়াল দেখে যারা পোশাক
কেনেন তাদের হয়তো বছরে এক-দু'বারই সেগুলো পরার অবকাশ জোটে। হিন্দি
সিরিয়ালের প্রভাব কতটা পড়ছে আমাদের সমাজে তা আলোচনার বিষয় নয়। বিষয়
বউ-শাশুড়ি সম্পর্কই। ভেবেছিলাম, শুধু সিরিয়ালের নামটি বলে প্রসঙ্গে আসব।
কিন্তু বউ-শাশুড়ি সম্পর্ক আর হিন্দি সিরিয়াল যেমন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে
জড়িয়ে আছে তাতে আলাপের একটু বিস্তার না করলে কি চলে? ঘটনা জয়পুরহাট জেলার
ক্ষেতলাল উপজেলার। সেখানে শাখারগঞ্জ-চৌধুরীপাড়ায় এক অভিনব আয়োজন হয়েছে
সম্প্রতি। সেখানে বউ-শাশুড়ির মেলা হয়েছে। এলাকার গৃহবধূ ও শাশুড়িরা মেলা
করেছেন। হৈ-হল্লা করে সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু অভিনব এ আয়োজন অনেককে আকৃষ্ট
করেছে। হাজারো মানুষ মেলা দেখতে এসেছেন। হঠাৎ করে বউ-শাশুড়ি মেলার কারণ কী?
হয়তো ঈদের সাইড এফেক্ট। শহর থেকে লোকেরা ঘরে ফিরেছে। এ অবকাশে ভিন্নধর্মী এ
আয়োজনের আইডিয়া খেলে গেছে কারও মনে। কিন্তু এমন মেলা সত্যিকার অর্থেই
ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে পরিবারগুলোতে। বউ-শাশুড়ি সংঘাত পরিবারগুলোতে যে
গৃহদাহ তৈরি করে তাতে এ মেলাগুলো আলাপ-আলোচনার খোলামেলা পরিবেশ তৈরি করতে
পারে। আর ওই বাগ্ধারাটিও কিন্তু ফেলনা নয়। কিঁউ কি সাস ভি কাভি বহু থি।
শাশুড়িও একদিন বউ ছিলেন_ এটি যেমন সত্য তেমনি এও সত্য যে, বউও একদিন শাশুড়ি
হতে পারেন। ফলে মিলেমিশে থাকাটাই শ্রেয়।
হতে পারেন। ফলে মিলেমিশে থাকাটাই শ্রেয়।
No comments:
Post a Comment