Wednesday, August 24, 2011
অতি অল্প হইল
আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে একটি লেখা পড়ছিলাম। তাতে পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে ভারতের ওই রাজ্যটির সরকারের উদ্যোগ নিয়ে বেশ সমালোচনা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে মূলত 'পরিবর্তনে'র স্লোগান দিয়ে। বামফ্রন্টের দীর্ঘদিনের শাসনের পরিবর্তন শুধু নয়, তিনি জানিয়েছিলেন ক্ষমতায় গেলে রাজ্যটির অনেক কিছুই পাল্টে দেবেন। সিংহাসনে আসীন হয়ে তিনি অনেক পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেগুলো পশ্চিমবঙ্গে ইতিবাচক হিসেবেই গৃহীত হয়েছে। পরিবর্তনের তালিকায় ছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নামও। বহুদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গবাসীর দাবি ছিল তাদের রাজ্যটির নাম বদল হোক। পশ্চিমবঙ্গ একটি আপেক্ষিক নাম। বঙ্গের পশ্চিম অংশই পশ্চিমবঙ্গ। মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ থাকলে পূর্ববঙ্গও থাকতে হয়। কিন্তু পূর্ববঙ্গ আর নেই। সে স্থলে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব জ্বলজ্বল করছে। তাই পশ্চিমবঙ্গবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল তাদের রাজ্যটির নাম পরিবর্তন হোক। বাংলা, বঙ্গ, বঙ্গভূমি, গৌড়বঙ্গ যাই হোক নামে একটা পরিবর্তন আসুক। পরিবর্তনের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দাবি মাথায় নিয়েই রাজ্যের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে রাজ্যটির পত্রপত্রিকায় নানা জল্পনা-কল্পনাও চলেছে খুব। লেখক সাহিত্যিক রাজনীতিকরা সমানে তর্ক-বিতর্ক করেছেন রাজ্যের ভাবি নাম নিয়ে। তর্কে-বিতর্কে একটি পাহাড় জমেছিল। কিন্তু এতশত তর্ক শেষ পর্যন্ত যে ফল দিল তাকে বাংলা একটি বাগধারা মেনে বলা যায়, পর্বতের মূষিক প্রসব। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের নাম পশ্চিমবঙ্গই থাকবে। কিন্তু ইংরেজিতে পশ্চিমবঙ্গকে একদিন যে ওয়েস্ট বেঙ্গল বলা হতো তা এবার রদ করা হয়েছে। ইংরেজিতেও পশ্চিমবঙ্গই লিখতে হবে। এতে লাভ কী হলো? পশ্চিমবঙ্গের বাইরে রাজ্যটির নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল এবং শব্দটির শুরু ডাবলিউ বর্ণ দিয়ে বলে ভারতীয় নানা সভা-সেমিনারে এ রাজ্যের প্রতিনিধির নাম আসত বর্ণানুক্রমিকভাবে সবার শেষে। এখন সেটি পি বর্ণ দিয়ে শুরু হবে। রাজ্যের নাম অনেক এগিয়ে আসবে। পর্বতের মূষিক প্রসবের এই ঘটনার পর কড়া সমালোচনা শুরু হয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, অতি অল্প হইল। পরিবর্তন যদি করতেই হয় তবে বড় পরিবর্তনই প্রত্যাশিত ছিল। তা না করে এইটুকু করাটা গ্রহণযোগ্য হলো না। শুধু এই সমালোচনাই নয়। আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পাদকীয় লিখে এই নাম পরিবর্তনের সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, পশ্চিমবঙ্গের নাম এ রাজ্যের লোকে কী বলে সেটার চেয়ে বাইরের লোকে এ রাজ্যকে কী নামে চেনে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে লোকে ওয়েস্ট বেঙ্গল বলত, সেটাই চেনা নাম, সেটি পরিবর্তন শ্রেয় হয়নি। যাই হোক, এই অতি অল্প পরিবর্তনে নাখোশ মানুষরা সমালোচনা করলেও এখনও আন্দোলনে নামেননি। বরং পত্রপত্রিকাতেই স্থিত আছেন। তবে এ ঘটনাটি পরিবর্তনের পরিমাণ নিয়ে একটা সন্দেহ তৈরি করেছে। পরিবর্তন আসলে কতটা সম্ভব? মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও চেইঞ্জ বা পরিবর্তনের ধুয়া তুলেছিলেন। তার করা পরিবর্তন নিয়ে সন্তুষ্ট নয় মার্কিনিরা। তারাও বলছে, অতি অল্প হইল। বিশ্বে তবে কি পরিবর্তন শব্দটাও এবার গুরুত্ব হারাবে? পরিবর্তনের কথা বলে ক্ষমতা আরোহণ ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে? লোকে পরিবর্তনের কথায় আর ভুলবে না? পরিবর্তন এক লোভনীয় শব্দ যে যার মতো করে পরিবর্তন চায়। বিদ্যমান অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। কেউ যদি মুক্তির স্বাদ দিতে চায় তবে স্বাভাবিক লোভ হয়। কিন্তু রাজনীতির নিজস্ব বাস্তবতা পরিবর্তনের পথে রাশ টেনে ধরে। পশ্চিমবঙ্গের নামে যে তেমন পরিবর্তন এলো না তাতে কত পিছুটান কাজ করেছে কে জানে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment