Monday, August 8, 2011

ছোট দলের ছোট ছোট সুখ


খালেদা জিয়াকে গামছা পরাচ্ছেন কাদের সিদ্দিকীর প্রতিনিধি
কথা হচ্ছিল ছোট রাজনৈতিক দলের এক নেতার সঙ্গে। এক না বলে একমাত্র বলাই ভালো। তার দলের নাম শুনি, বড় একটা জোটে দলের অংশগ্রহণের খবরও পাই পত্রিকায়। কিন্তু ওই নেতা ভিন্ন আর কারও দেখা পাই না। ফলে দল বলতে তার কথাই মনে হয়। তার বাইরে দল কতটা আছে সন্দেহ হয়। ছোট দলের সেই নেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার দল আসলে কোথায়? দল কী করে? নেতা জানালেন, দল নিশ্চয়ই আছে। সবচেয়ে বড় কথা পূর্ণাঙ্গ কমিটিও আছে। কিন্তু কমিটির সদস্যরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে ছোট ছোট দলের ছোট জোটে বা বড় ও ছোট দলের বড় জোটে তাকেই প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। তাই তার নামটাই লোকে জানে, তাকেই চেনে। কিন্তু জেনে রাখার মতো খবর হলো, একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি তাদের আছে। জোটগতভাবে কর্মসূচিও থাকে। কমিটির সদস্যরা কম হোক বেশি হোক কর্মসূচিতে অংশও নেন। আর নেতা বড় বড় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দেশের নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। নেতার সঙ্গে আলাপ করে বুঝে ওঠা কঠিন ছোট দলের কাজ আসলে কী? তবে মোটামুটি বোঝা যায়_ ছোট দলের একটা বড় কাজ হলো রাজনৈতিক জোটে দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। জোট গঠন করতে গেলেই বোঝা যায়, ১৪-১৬ কোটি মানুষের দেশে দল কত কম। এত লোক অথচ ক্ষমতাসীন জোটগুলো মাত্র ১৪ বা ৪ দল নিয়ে গঠিত হয়। অথচ সংখ্যানুপাতিক হারে জোটে দলের সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত। আশার কথা, দেশের বড় দুটি দল এখন জোট বৃদ্ধি করার কাজে মন দিয়েছে। ভোট নেই, আন্দোলন নেই তবু সংখ্যাবৃৃদ্ধি কেন_ এ প্রশ্নের জবাব মিলছে না। কিন্তু ছোট দলগুলো বেশ শান্তিতে আছে। যেসব ছোট দলের নেতারা বড় তারা একটু এগিয়ে চরম শান্তিতে আছেন। মিডিয়া তাদের কভারেজ দিচ্ছে। তারা দেশ ও দশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলছেন। সরকারের আয়ুষ্কাল নিয়ে জ্যোতিষচর্চা করছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা_ বিশেষ করে লিয়াজোঁ বিশারদরা ছোট দলের নেতাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। ছোট দলের নেতারা বাগে পেয়ে তাদের গামছা পরাচ্ছেন। টুপি-পাগড়িও পরাবেন বোঝা যাচ্ছে। সাধারণত, ছোট দলের নেতারা বড় দলের নেতাদের কাছে ফুল ও দলবল নিয়ে যায়। ফুল দিয়ে দলে যোগ দেয়। নরমালি যে যোগ দিল তাকেই ফুল দিয়ে বরণ করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটে। যিনি যোগ দেবেন তিনি ফুল নিয়ে যান। এবার আরও ব্যতিক্রম ঘটছে। যিনি অতিথি তারই উপহার নিয়ে বাসায় যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে, উল্টো গামছা-টুপি-পাগড়ি নিয়ে ফিরছেন তারা। এইসব আলাপ-আলোচনা, বৈঠক-ফিরতি বৈঠকের তালিকায় এখন স্থান পেয়েছে ইফতার সারপ্রাইজ। সবচেয়ে বড় ইফতার সারপ্রাইজ হতে পারত যদি বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রীর অথবা প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার ইফতারে উপস্থিত হতেন। বাস্তবে তা ঘটছে না, বরং ছোট দলের নেতারা ইফতারে উপস্থিত হয়ে চমক দিচ্ছেন। অবশ্য চমকেই শেষ হচ্ছে ব্যাপারগুলো। এখন পর্যন্ত কোনো ছোট দলই কোনো জোটের দিকে হেলেনি। পাকা কথা দেয়নি। বোঝা যায়, অনেক দিন পাদপ্রদীপের বাইরে থাকার পর এখন তারা ধীরে এগুনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফয়সালা হয়ে গেলে আলো সরে যাবে। তাই ছোট ছোট সুখগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন তারা। ছোট দলগুলোর ছোট সুখগুলো দীর্ঘজীবী হোক। কিন্তু বড় দলগুলোর ছোট-প্রীতি সহসা কেন উথলে উঠল সে প্রশ্নের উত্তর কিন্তু কিছুতেই মিলছে না। বড়র মন বোঝা বড় ভার।

No comments:

Post a Comment