Saturday, September 18, 2010

ঈদের সপ্তম দিন


রোজা শেষ। ক্যালেন্ডার ও রীতি অনুসারে ঈদও শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বঙ্গদেশে ঈদ যেন যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসে না। আজ যাই কাল যাই করে করে ঈদ এবার সপ্তম দিনে পদার্পণ করল। বিশ্বাস না হলে টিভি খুলে দেখুন। বাহারি বিজ্ঞাপনে টিভিগুলো ক্ষণে ক্ষণেই জানিয়ে দিচ্ছে আজ ঈদের কততম দিন আর এ উপলক্ষে কী কী আয়োজন নিয়ে তারা দর্শকের সামনে হাজির হবে। ঢাকার রাস্তার দিকে তাকালেও টিভির আয়োজনের যথার্থতাকে ভুল বলে মনে হবে না। ১১ সেপ্টেম্বর ঈদ পালিত হলে ১২ তারিখেই অধিকাংশের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ছুটির নিয়ম অনুসারে সোমবার পুরোদমে অফিস শুরু হবে, রাস্তায় কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড় তৈরি হবে, যানে যানে জট লাগবে_ এও খুব প্রত্যাশিত ব্যাপারই ছিল। কিন্তু সোমবারের ঢিলেঢালা অফিস বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢিলেঢালাই রয়ে গেল। দোকানপাট, মার্কেট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত পুরো সপ্তাহজুড়ে বন্ধই থাকল প্রায়। পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের কর্মবীররা সপ্তাহটিকে কাবার করে শনিবারের ছুটিটা আরামে কাটিয়ে রোববার নাগাদ কাজ শুরু করার মহাপরিকল্পনাই হাতে নিয়েছেন। দোষ কাকে দেবেন? সরকারকে? রমজান মাসে সরকারি আদেশে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল বটে কিন্তু ঈদের পর দোকানপাট বন্ধ রেখে, ঢিলেঢালা অফিস করে সপ্তাহ গুজরান করার নির্দেশ তো সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি। তবে কি টিভি চ্যানেলগুলোকেই দোষ দেব আমরা? ওরা একদিনের ঈদের খুশিকে ৭ দিনে প্রবাহিত করল বলেই না এমনটি হলো! এমন কথা কেউ বলতে পারেন। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলছেন অন্যকথা। বিজ্ঞাপনের ভিড়ে ঢাকার চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান নাকি অনেকেরই দেখা হয়ে ওঠে না। এখানকার দর্শকরা নাকি শুধু ৭ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কোন টিভিতে কী আয়োজন হচ্ছে, তার বিজ্ঞাপনই দেখেন। আশ্বস্ত হয়ে বলেন, ভাবতে ভালো লাগে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক ঈদেই কত অনুষ্ঠান। আর চ্যানেল ঘুরিয়ে হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখে দিন পার করে দেন। বিজ্ঞাপনের বাহার আছে, রঙের ব্যবহার আছে কিন্তু অন্তঃসারের বেলা নাকি আমাদের অনেক অনুষ্ঠানই পাতে তোলার মতো নয়। শত শত অনুষ্ঠান, নাটকের পর যখন পত্রিকার পাতায় মূল্যায়নের আসর বসে তখন নাকি পাঁচ-দশটি ভালো কাজ খুঁজে বের করাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
আশা করা যায়, ঈদের সপ্তম দিনের মতো নবম থেকে পঞ্চদশ দিন পর্যন্ত সবার ভালো কাটবে। কর্মবিমুখ অলস জাতি হিসেবে আমাদের যে সুনাম নিজেদের মধ্যেই ছড়িয়েছে, তাতে রোজার দোহাই দিয়ে এক মাস আর ঈদের দোহাই দিয়ে আরও ১৫ দিন কাটিয়ে দিলে কেউ টুঁ শব্দটিও করবে না। অবশ্য শুধু আলস্যের দোহাই দিলেই চলবে না, আতিশয্যও কি কম আমাদের? ঈদ আসছে, ঈদ এসেছে, ঈদ যাচ্ছে_ এ নিয়ে টিভি চ্যানেলগুলোর কোনায় কোনায় স্থায়ী আইকন ঝুলছে। শুধু ঈদ কেন, জাতীয় জীবনের কত কিছুই তো একদিনে পার করে দিতে পারলে আমাদের আর মন ভরছে না। মাসের একদিন হয়তো বিশেষভাবে স্মরণীয়, শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের কিন্তু তাতে আমরা পরিতৃপ্ত নই। মাসজুড়ে পত্রিকার কোনায়, টিভির কোনায় ঝুলছে মাসের স্মারক। এপ্রিলে হয়তো ৫ তারিখ আনন্দের দিন। কিন্তু আমাদের রীতি হলো পুরো এপ্রিলকেই আনন্দের মাস ঘোষণা করে নানা আয়োজনে ভরিয়ে তোলা। আনন্দবহ এপ্রিল শিরোনাম দিয়ে পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখা। আর এসব আয়োজন, কথা, আলোচনার মধ্যে সৃজনশীলতার স্বাক্ষর কতটা থাকে তা নিশ্চয়ই গবেষণার বিষয়। কিন্তু পুনরাবৃত্তি যে বেশ থাকে তা স্পষ্ট। ফলে আয়োজনের মধ্যে আন্তরিকতার চেয়ে দেখানোর ব্যাপারটাই বেশি গুরুত্ব পায়। আলস্যের পাশে তাই আতিশয্যের স্থান বিশেষভাবে দিতে হবে। ঈদের ক্ষেত্রেও এই আতিশয্যের কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নইলে কি আর একদিনের ঈদ সপ্তম দিনে এসেও আমাদের দ্বিপ্রাহরিক ঘুমের নিরাপত্তা দিতে পারে?

No comments:

Post a Comment