Thursday, September 30, 2010
কেশাকেশি
বাংলা একাডেমীর 'ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে' চুলোচুলি বা চুলাচুলির প্রতিশব্দ কেশাকেশি। পরস্পর চুল টানাটানি করে যে মারামারি তাকে চুলাচুলি বলা হয়। অভিধান ইঙ্গিত দিচ্ছে, 'চুলাচুলি' বললে তাতে চুলের ব্যবহার থাকুক বা না থাকুক শব্দটি দিয়ে ভীষণ ঝগড়া বা কলহ বোঝায়। অভিধান যা-ই ইঙ্গিত দিক চুলোচুলিতে চুলের ব্যবহার না থাকলে তাকে চুলোচুলি বলতে অনেকেরই বাধবে। আর চুলের প্রসঙ্গ এলে এসে যাবে চুলের মালিকদের কথাও। লম্বা চুলের ফ্যাশনেবল তরুণদের দেখা এখন পথে-ঘাটে অনেক মেলে। সে তরুণরা যদি কলহ করতে গিয়ে চুলোচুলি করে তবে নিশ্চয় গণমাধ্যমে সেটি 'চুলোচুলি' হিসেবে খবর হবে কি-না আপাতত এ প্রশ্ন তোলা থাকল। কারণ যারা শিক্ষাঙ্গনে কলহ করে তারা লম্বা চুলো বা টেকো মাথা যাই হোক না কেন ছেলে হলে সংঘর্ষের ধরনই হয় আলাদা। চুল ধরে মারামারি না করে লাঠিসোটা কিরিচ চাপাতি ব্যবহার করতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর প্রস্তুতির সময় পেলে পিস্তল-বন্দুক এসে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়। পিস্তল-বন্দুক এলে দু'চারটি লাশ পড়া, পাঁচ-দশজন আহত হওয়াও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। দোতলা-তিনতলা-চারতলা থেকে ফেলে আহত-নিহত করার নতুন কায়দাও শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে ইডেন কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা যে রক্তপাতহীন চুলোচুলি করেই ক্ষান্ত হলেন। লাঠিসোটা নিয়ে মাঠে নামলেন না, দু'চার রাউন্ড গুলি ফোটালেন না, কিংবা হলের ছাদ থেকে সহপাঠীদের ফেলে দিলেন না, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ দেওয়াই যেতে পারে। কিন্তু আমাদের মিডিয়া বড় বেরসিক। মেয়েরা খুনোখুনি করল না, লাশ ফেলল না তবু হৈচৈটা এমন হলো যেন একেকটা লাশের চেয়ে একেকটা চুলের দাম বেশি! সব পত্রিকা কেমন ফলাও করে ছেপেছে, শহরে-গ্রামে এ নিয়ে রসাল কথাবার্তাও হচ্ছে বেশ। নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। এখন সরকারি দলের কেউ বিবৃতি দিয়ে মেয়েগুলোকে অনুপ্রবেশকারী শিবির-ছাত্রদল না বললেই হয়। অবশ্য শিবির-ছাত্রদল না হলে প্রধানমন্ত্রীর ছবি এভাবে লুটিয়ে ফেলতে পারে কেউ? চিন্তার বিষয় বটে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের ব্যাপারে অনেক সচেতন। কোথাও ছবি ঠিকমতো টাঙানো না থাকলে মামলা ঠুকে দেন। ক'দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে ধুলা জমেছে বলে একটা মামলা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। বেশ, এখন এইভাবে জন্মদিনের দিন প্রকাশ্য দিবালোকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ধুলায় লুটিয়ে চুলোচুলি করার মতো অপরাধে নারী শিক্ষার্থীদের কী শাস্তি হয় সেটি এখন দেখার বিষয়।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের মানমর্যাদার কথা যদি বিবেচনা করা হয় তবে ঘটনাটি চেপে যাওয়াই উত্তম হবে। কিন্তু ছবি যেভাবে ছাপা হলো তাতে কি চাপা দিলেই চেপে যাওয়া সম্ভব?
তবে উপায় কী? আগে যেমনটি বললাম, সেইভাবে যদি নেতাদের কেউ এসে বলেন, এরা শিবির-ছাত্রদল, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনকে হেয় করতেই এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তবে বড় বাঁচা। উদোর পিণ্ডি বুধো সামলাবে তখন।
আরেক কাজ করা যায়, এ রীতি এখন বেশ কল্কে পেয়েছে। কাউকে সাহস করে বলতে হবে, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। গণমাধ্যম অতিরঞ্জন করেছে। ব্যস, সবাই বিশ্বাস করবে! নয়তো কোনো ফোরামে ছাত্রলীগের মধ্যকার এমন সংঘর্ষের ছবি ছাপাবার দায়ে মিডিয়ার বিচার দাবি করা যায়। ছাত্ররা মারামারি করবে, করুক। ছাত্রীরা চুলোচুলি করবে, করুক। দলীয় নেতাকর্মীরা বিনাপরীক্ষায় চাকরি, বিনাটেন্ডারে কাজ, বিনাআয়াসে কামাই এখন করবে না তো বিএনপি আমলে করবে? অতএব, চলুক না। মিডিয়া শুধু শুধু বাড়াবাড়ি করে। ওরা কি জানে না, বাড়াবাড়ি করলে অন্যেরা
সুযোগ নেয়?
Monday, September 20, 2010
গরু-ভীতি
'গ রু অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের গৃহপালিত পশু। ইহার একটি মাথা, দুইটি কান ও একটি লেজ আছে। লেজের মাথায় একগুচ্ছ কেশ দিয়া গরু মশা-মাছি তাড়ায়।' এমনিভাবেই অত্যন্ত উপকারী এ প্রাণীটি নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে ছেলেমেয়েরা প্রথম রচনা লিখতে শুরু করে। পৃথিবীতে এত কিছু থাকতে শিক্ষকমণ্ডলী কেন রচনা লেখার হাতেখড়ি দিতে গরুর কথা স্মরণ করেন তা বের করা মুশকিল। গরুদের প্রতি গুরুদের এই অভাবিত ভক্তির কারণে বাংলার শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সবার কাছেই গরু পরিচিত প্রাণী। শুধু পরিচিত নয়, রচনার ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, গরুর উপকারের শেষ নেই। 'ইহার চামড়া হইতে জুতা, ব্যাগ প্রভৃতি তৈরি হয়। গরুর দুগ্ধ প্রতিদিন আমরা পান করি। দুগ্ধ হইতে মিষ্টান্নও প্রস্তুত হয়। অর্থনীতিতে গরুর অবদান বলিয়া শেষ করা যায় না।' এমন উপকারী প্রাণী যখন বিপদে পড়ল, যখন অ্যানথ্রাক্সে মারা পড়তে থাকল একে একে, তখন অনেকে একে গরু জাতির সমস্যা হিসেবেই দেখতে শুরু করেছিলেন। ভেবেছিলেন, মানবজাতিকে এ রোগ স্পর্শ করবে না। কিন্তু ক্রমে মানবজাতিকেও অ্যানথ্রাক্স আক্রমণ করল। বলা হলো, অ্যানথ্রাক্স হলো পরিচিত তড়কা। মনে হলো, অনেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন, যেন 'ওহ তড়কা, সেরে যাবে।' কিন্তু তড়কা না সেরে তড়াক তড়াক করে বেড়েই চলেছে। প্রথম প্রথম মেদভুঁড়ি নিয়ে চিন্তিত লোকেরা ভেবেছিলেন, ভালোই হলো, অ্যানথ্রাক্সের ভয় কাজে লাগিয়ে কিছুদিন মেদ কমিয়ে নিই। আবার যারা শখের ভেজিটারিয়ান তারা ভাবলেন, অবশেষে সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। মুরগি ব্যবসায়ীরা কিছুদিন জমজমাট ব্যবসা করলেন। বার্ড ফ্লুর সময় সবাই যেভাবে মুরগির বাজারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে গরুর বাজারের দিকে ছুটেছিলেন, তার উল্টোটা ঘটল এবার। দেখতে দেখতে এক মাস অতিক্রান্ত হলো। এখন ধীরে ধীরে মালুম হচ্ছে, রোগটি নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। গরু ব্যবসায় মন্দা, মাংস ব্যবসায় মন্দা, চামড়া ব্যবসায় মন্দা, শোনা যায় দুধ খেতে গিয়েও লোকে এখন ভাবছেন, অ্যানথ্রাক্স হবে কি-না। ভীতির মা-বাপ নেই, ছড়াতে থাকলে থামে না। শোনা যাবে কিছুদিনের মধ্যে গরুর চামড়ায় প্রস্তুত স্যান্ডেলও পরতে চাইছেন না ভীত মানুষজন। গুজবের চেয়ে শক্তিশালী ভীতি এখন সারাদেশে। গরুর মাংসের দোকানে মাছি উড়ছে, ক্রেতা আসছে না। বিক্রেতা বাহারি রান, সিনা ঝুলিয়ে ঘুমাচ্ছেন। আর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি বলেছে, ১৫ দিনের মধ্যে গরুগুলোকে ভ্যাকসিন দিন, নইলে কঠোর কর্মসূচি। দুগ্ধ, চামড়া, জুতা ব্যবসায়ীরা অনুরূপ দাবি নিয়ে মাঠে নামবেন বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। ঈদুল আজহা এলে গরু মোটাতাজা করা কৃষক, ব্যাপারিদের দাবি কেমন হবে একটু ভাবা যেতে পারে। দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে সেটি নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়। কোরবানির আগে সমস্যার সমাধান না হলে কী উপায় হবে সে ভাবনা এখনই ভাবতে হবে। ফলে দেরি না করে এখনই ভ্যাকসিন দিতে হবে। সব গরুকে ভ্যাকসিন দিয়ে অ্যানথ্রাক্স তাড়াতে হবে। মানুষের দেহে সংক্রমিত জীবাণুর ধ্বংসের যাবতীয় আয়োজনও শেষ করতে হবে। দায়িত্বশীলরা এই ক্ষেত্রে বসে থাকলে চলবে না। কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র। আর প্রশ্নটা মাংস ব্যবসায়ীদের কাছেই, সব গরু তো আর অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত নয়। আর তারাও নিশ্চয়ই রোগাক্রান্ত গরু জবাই করছেন না। নিশ্চয়, রোগমুক্ত গরু নিয়মমতো জবাই করে, ভালো মাংসই সাজিয়ে রাখছেন দোকানে। কিন্তু লোকে ভরসা পাচ্ছে না কেন? লোকের ভরসা তো আর পুলিশ ডেকে বাড়ানো যাবে না। মাংসের খাঁ খাঁ করা দোকানে ক্রেতা ফিরিয়ে আনতে হলে ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে হবে। গরুকে ভ্যাকসিন দিলে মানুষের আস্থা বাড়বে কি?
Saturday, September 18, 2010
ঈদের সপ্তম দিন
রোজা শেষ। ক্যালেন্ডার ও রীতি অনুসারে ঈদও শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বঙ্গদেশে ঈদ যেন যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসে না। আজ যাই কাল যাই করে করে ঈদ এবার সপ্তম দিনে পদার্পণ করল। বিশ্বাস না হলে টিভি খুলে দেখুন। বাহারি বিজ্ঞাপনে টিভিগুলো ক্ষণে ক্ষণেই জানিয়ে দিচ্ছে আজ ঈদের কততম দিন আর এ উপলক্ষে কী কী আয়োজন নিয়ে তারা দর্শকের সামনে হাজির হবে। ঢাকার রাস্তার দিকে তাকালেও টিভির আয়োজনের যথার্থতাকে ভুল বলে মনে হবে না। ১১ সেপ্টেম্বর ঈদ পালিত হলে ১২ তারিখেই অধিকাংশের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ছুটির নিয়ম অনুসারে সোমবার পুরোদমে অফিস শুরু হবে, রাস্তায় কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড় তৈরি হবে, যানে যানে জট লাগবে_ এও খুব প্রত্যাশিত ব্যাপারই ছিল। কিন্তু সোমবারের ঢিলেঢালা অফিস বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢিলেঢালাই রয়ে গেল। দোকানপাট, মার্কেট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত পুরো সপ্তাহজুড়ে বন্ধই থাকল প্রায়। পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের কর্মবীররা সপ্তাহটিকে কাবার করে শনিবারের ছুটিটা আরামে কাটিয়ে রোববার নাগাদ কাজ শুরু করার মহাপরিকল্পনাই হাতে নিয়েছেন। দোষ কাকে দেবেন? সরকারকে? রমজান মাসে সরকারি আদেশে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল বটে কিন্তু ঈদের পর দোকানপাট বন্ধ রেখে, ঢিলেঢালা অফিস করে সপ্তাহ গুজরান করার নির্দেশ তো সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি। তবে কি টিভি চ্যানেলগুলোকেই দোষ দেব আমরা? ওরা একদিনের ঈদের খুশিকে ৭ দিনে প্রবাহিত করল বলেই না এমনটি হলো! এমন কথা কেউ বলতে পারেন। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলছেন অন্যকথা। বিজ্ঞাপনের ভিড়ে ঢাকার চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান নাকি অনেকেরই দেখা হয়ে ওঠে না। এখানকার দর্শকরা নাকি শুধু ৭ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কোন টিভিতে কী আয়োজন হচ্ছে, তার বিজ্ঞাপনই দেখেন। আশ্বস্ত হয়ে বলেন, ভাবতে ভালো লাগে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক ঈদেই কত অনুষ্ঠান। আর চ্যানেল ঘুরিয়ে হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখে দিন পার করে দেন। বিজ্ঞাপনের বাহার আছে, রঙের ব্যবহার আছে কিন্তু অন্তঃসারের বেলা নাকি আমাদের অনেক অনুষ্ঠানই পাতে তোলার মতো নয়। শত শত অনুষ্ঠান, নাটকের পর যখন পত্রিকার পাতায় মূল্যায়নের আসর বসে তখন নাকি পাঁচ-দশটি ভালো কাজ খুঁজে বের করাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
আশা করা যায়, ঈদের সপ্তম দিনের মতো নবম থেকে পঞ্চদশ দিন পর্যন্ত সবার ভালো কাটবে। কর্মবিমুখ অলস জাতি হিসেবে আমাদের যে সুনাম নিজেদের মধ্যেই ছড়িয়েছে, তাতে রোজার দোহাই দিয়ে এক মাস আর ঈদের দোহাই দিয়ে আরও ১৫ দিন কাটিয়ে দিলে কেউ টুঁ শব্দটিও করবে না। অবশ্য শুধু আলস্যের দোহাই দিলেই চলবে না, আতিশয্যও কি কম আমাদের? ঈদ আসছে, ঈদ এসেছে, ঈদ যাচ্ছে_ এ নিয়ে টিভি চ্যানেলগুলোর কোনায় কোনায় স্থায়ী আইকন ঝুলছে। শুধু ঈদ কেন, জাতীয় জীবনের কত কিছুই তো একদিনে পার করে দিতে পারলে আমাদের আর মন ভরছে না। মাসের একদিন হয়তো বিশেষভাবে স্মরণীয়, শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের কিন্তু তাতে আমরা পরিতৃপ্ত নই। মাসজুড়ে পত্রিকার কোনায়, টিভির কোনায় ঝুলছে মাসের স্মারক। এপ্রিলে হয়তো ৫ তারিখ আনন্দের দিন। কিন্তু আমাদের রীতি হলো পুরো এপ্রিলকেই আনন্দের মাস ঘোষণা করে নানা আয়োজনে ভরিয়ে তোলা। আনন্দবহ এপ্রিল শিরোনাম দিয়ে পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখা। আর এসব আয়োজন, কথা, আলোচনার মধ্যে সৃজনশীলতার স্বাক্ষর কতটা থাকে তা নিশ্চয়ই গবেষণার বিষয়। কিন্তু পুনরাবৃত্তি যে বেশ থাকে তা স্পষ্ট। ফলে আয়োজনের মধ্যে আন্তরিকতার চেয়ে দেখানোর ব্যাপারটাই বেশি গুরুত্ব পায়। আলস্যের পাশে তাই আতিশয্যের স্থান বিশেষভাবে দিতে হবে। ঈদের ক্ষেত্রেও এই আতিশয্যের কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নইলে কি আর একদিনের ঈদ সপ্তম দিনে এসেও আমাদের দ্বিপ্রাহরিক ঘুমের নিরাপত্তা দিতে পারে?
Thursday, September 2, 2010
ভোভা ও দিমা
ভোভা ও দিমা অত্যন্ত পরিচিত জুটি। বাংলা সিনেমায় উত্তম-সুচিত্রা যেমন তেমনি রাশিয়ার রাজনীতিতে ভোভা ও দিমা জনপ্রিয় জুটি। একজন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন (ভোভা) আরেকজন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ (দিমা)। ভোভা ও দিমার সম্পর্ক নিয়ে বিশ্ববাসীর আগ্রহ প্রচুর। তাই মিডিয়াও তাদের দিকে খেয়াল রাখে। এই গ্রীষ্মে ভোভা ও দিমা কী করলেন সে নিয়ে ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিন একটি ফটো ফিচার প্রকাশ করেছে। এই ফিচারের সঙ্গে তারা জুড়ে দিয়েছে গত গ্রীষ্মের ছবিও। দেখা গেল, ২০০৯-এর গ্রীষ্মে ভোভা ও দিমা একসঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু ২০১০-এর গ্রীষ্মে প্রধানমন্ত্রী ভোভা যখন তিমি শিকার করে, দেশ ঘুরে, অগি্নকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রাশিয়া তদারক করে বেড়িয়েছেন, তখন দিমা রাশিয়ার রিসোর্ট সিটি সোচিতেই বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন। ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিন রসিক বটে। একটির পর একটি ছবি সাজিয়ে ভোভা ও দিমার দূরত্বটা বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আসলেই কি পুতিন ও মেদভেদেভের মধ্যে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে?
১৯৯৯ সালের শেষ দিন বরিস ইয়েলৎসিন পুতিনকে ক্ষমতা দিয়ে যাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনিই রাশিয়া চালাচ্ছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ২০০৮ পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে তৃতীয় দফা হয়তো আবার নির্বাচিত হতেন। কিন্তু সংবিধান এসে বাগড়া দিল। সংবিধান মোতাবেক তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন না তিনি। কিন্তু তখনও ভোভার জনপ্রিয়তা কমেনি। রাজনীতিও তাকে ছাড়েনি। ফলে নিজের স্নেহধন্য মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিয়ে নিজে প্রধানমন্ত্রী হন।
লোকে বলে, প্রেসিডেন্ট হন কি প্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার চাবি আসলে পুতিনেরই হাতে। আর পুতিনই হলেন বিশ্বের বিরল সেই রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যার জনপ্রিয়তা ৬০%-এর নিচে নামেইনি। ২০০৭ সালে পুতিনকে নিয়ে একটি সংখ্যা করেছিল টাইম ম্যাগাজিন। সেখানে তাকে অভিধা দেওয়া হয়েছিল 'রাশিয়ার নতুন জার' হিসেবে। মেদভেদেভ জনপ্রিয় কারণ তিনি পুতিনের মনোনীত, এমন বিশ্বাসও করা হয়। মেদভেদেভ-পুতিন জুটির মধ্যে বোঝাপড়াও চমৎকার।
ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিনের অ্যালবামে একটি ছবি দেখা গেল, যেখানে ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্টের অফিসে বামে বসেছেন মেদভেদেভ আর ডানে পুতিন। বামেরটাই প্রেসিডেন্টের আর ডানেরটা অতিথির। পত্রিকাটি মনে করিয়ে দিয়েছে ২০০৮ সালের একটি ঘটনার কথা। সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আর নতুন প্রধানমন্ত্রী পুতিন তখন ক্রেমলিনে এসেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম দেওয়ার জন্য।
স্বভাববশত পুতিন এগিয়ে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের সিটের দিকে, কিন্তু সম্ভবত হঠাৎই তার মনে পড়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী তাই বলেন, 'এ আসনটা এখন থেকে তোমার।' মেদভেদেভ তখন পরিস্থিতি সামলে বলে উঠলেন, 'তাতে কী হয়েছে?' বলেই বসে পড়লেন অতিথির আসনে। তখন প্রেসিডেন্টের আসনে বসা পুতিন আর অতিথির আসনে বসা মেদভেদেভের ছবিও ছাপা হয়েছিল পত্রিকাগুলোতে। সেই ছবির কথা মনে করিয়ে দিয়ে এখনকার একটা ছবি ছেপেছে ফরেইন পলিসি। তাতে প্রেসিডেন্টকে যথাস্থানে দেখা যাচ্ছে। পত্রিকাটি ফোঁড়ন কেটেছে, প্রেসিডেন্ট তাহলে তার আসনেই বসছেন। এবারের গ্রীষ্মে ভোভা ও দিমার দুই জায়গায় কাটানো কি তাহলে মেদভেদেভের একলা চলার কোনো ইঙ্গিত?
Subscribe to:
Posts (Atom)