২২ ফেব্রুয়ারির টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, ভারতের 'সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনে'র কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক অফিসগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা যেন সিনেমার আইটেম সঙগুলোকে 'এ' ক্যাটাগরিভুক্ত করেন। 'এ' ক্যাটাগরিভুক্ত হলে আইটেম সঙগুলো অ্যাডাল্ট উপাদান হিসেবে গণ্য হবে। ফলে আইটেম গান আছে এমন চলচ্চিত্র শুধু প্রাপ্ত বয়স্করাই দেখতে পারবেন। তবে আইটেম গানের 'এ' প্রাপ্তির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে টিভিতে। টিভি যেহেতু সবাই দেখে, সেহেতু সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে টিভিতে আইটেম সঙ প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। আইটেম সঙ ও মুভি নির্মাতাদের জন্য এটি দুঃসংবাদ নিঃসন্দেহে। কেননা আইটেম সঙের জনপ্রিয়তা টিভিই তৈরি করে। টিভিতে গান দেখেই দর্শকরা হলে যান সিনেমা দেখতে। টিভিতে প্রচার বন্ধ হলে যে এর প্রভাব হলেও পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য সেন্সরের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের করারই-বা কী আছে? সাম্প্রতিক সময়ে আইটেম সঙগুলো এতটাই দুষ্ট হয়ে উঠছিল যে, এগুলো নিয়ন্ত্রণের একটা উপায় বের করা খুব দরকারি হয়ে পড়েছিল। মুম্বাইয়ের সিনেমার দর্শকমাত্রই জানেন আইটেম সঙ কী বস্তু। সিনেমার কাহিনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই সাধারণত থাকে না। রসাল গান, ইঙ্গিতপূর্ণ লিরিক বিখ্যাত কোনো নায়িকাকে দিয়ে রসাল ভঙ্গিতে পরিবেশন করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, ভালো-মন্দ নির্বিশেষে মুম্বাইয়ের সিনেমায় আইটেম গানের একটা বিশেষ জায়গা তৈরি হয়েছে। উইলিয়াম শেকসপিয়রের ওথেলো অবলম্বনে তৈরি ওমকারার মতো বুদ্ধিদীপ্ত সিনেমায় যেমন আইটেম সঙ আছে, তেমনি এমনও সিনেমা আছে যাতে একটা হিট আইটেম সঙ ছাড়া বিশেষ আর কিছুই থাকে না। সে গানের জোরেই সিনেমা হিট এমনকি সুপারহিট হয়ে যায়। সাধারণত যেসব হিন্দি গান সচরাচর চারদিকে বাজতে শোনা যায় সেগুলো আইটেম গানই। এগুলোকে আইটেম নম্বরও বলা হয়। বিনোদনপিয়াসী দর্শকরা মুভিতে কয়টি আইটেম নম্বর আছে সে হিসাব জেনে নিয়েই হলে ঢোকেন। যে নায়িকারা আইটেম গানে অংশ নেন তারা আইটেম গার্ল। আইটেম গার্লদের পারিশ্রমিক বেশি। একটা আইটেম গানে অংশ নিয়েই তারা বড় সম্মানী পান। আইটেম গানের বাজার মূল্যের কারণে মুভি নির্মাতারা একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলছিলেন। আর তাই লাগামটা টানা হলো। এখন নিশ্চয়ই মুভি নির্মাতারা সতর্ক হবেন। বোম্বে সিনেমার হুম্মা হুম্মা, দিল সের ছাইয়া ছাইয়া, বান্টি আউর বাবলির কাজরা রের মতো গান যদি আর তৈরি না হয় তবে দর্শকদের জন্য তা দুঃখের ঘটনাই হবে। আইটেম সঙের এই আকস্মিক অন্তর্ধান নিয়ে কভার স্টোরি প্রকাশ করেছে আউটলুক পত্রিকা। আইটেম গানের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন তারা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন আইটেম সঙ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্টিফিকেশন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে, তা জানা গেল আউটলুক থেকেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, নারী নির্যাতন বাড়িয়ে দিচ্ছে আইটেম সঙ। বলিউডের ডিরেক্টর দিবাকর ব্যানার্জির মতে, সমাজের আরও বড় বড় সমস্যার দিকে না তাকিয়ে আইটেম সঙকে দোষারোপ করে এর সমাধান হবে না। পিতৃতন্ত্র, সামন্ততন্ত্রসহ নানা সমস্যাই তো আছে। সেগুলোর সেন্সর কে করবে? অন্যদিকে রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা মনে করেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেওয়া হয়েছে। আইটেম সঙ সিনেমার জন্য নেতিবাচক। মুম্বাইতে একটি মত প্রবল হয়ে উঠছে যে, বহু বছরের চর্চায় এখানকার সিনেমা-সংস্কৃতি যথেষ্ট পরিপকস্ফ। কিন্তু গানসহ কিছু মেলোড্রামাটিক উপাদান মুম্বাইয়ের সিনেমার অগ্রযাত্রার পথে বাধা। একটা বাঁধা ছকের বাইরে সিনেমাকে বের করে নিয়ে আসার জন্য বাজার মাত করার সনাতন পদ্ধতিগুলো থেকে বের হয়ে আসা উচিত। আইটেম সঙ বন্ধ হলে, সে পথ যে খুলে যাবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু দর্শকরা কী করবেন। বিনোদন যাদের মূল লক্ষ্য তারা 'এ' পাওয়া সিনেমাগুলো দেখবেন হয়তো। কিন্তু যে সিনেমা শুধু আইটেম গানের জন্য 'এ' পেল সে সিনেমা পরে সর্বার্থে এ পাওয়ার চেষ্টা করবে না তো?
Thursday, February 28, 2013
Friday, February 22, 2013
ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং
বিখ্যাত এক লেখক স্মৃতিকথায় জানিয়েছিলেন, আজ ভ্যালেন্টাইন বলতে যেমন আয়োজন বোঝায়, তেমনটা তারা কৈশোরে সরস্বতী পূজায় পেতেন। পড়াশোনার চাপের চেয়ে বেশি ছিল অভিভাবকদের চাপ। তাই পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে দেখা হওয়া দূরের কথা, ভালোমতো চোখাচোখিই হতে পারত না। সরস্বতী পূজার দিনে একটা স্বাধীনতা পাওয়া যেত। আর সেই অবকাশে মন দেওয়া-নেওয়া হয়ে যেত। এখন অবশ্য সেকালের মতো অত চাপ নেই। এখন ভালোবাসার জন্য বছরভর অপেক্ষার বালাই নেই। ফেসবুকে বা সেলফোনে স্রেফ মনের কথা জানালেই হলো। যুগ বদলেছে। বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দিবসও তৈরি হয়েছে। যেমন, পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডে। বৈশাখের প্রথম দিনের মতো বসন্তের প্রথম দিনটি বেশ ঘটা করেই পালিত হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। বাংলাদেশে বাংলা সনের যে ক্যালেন্ডার, তাতে বসন্তের দ্বিতীয় দিনেই ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস। এবার তৃতীয় দিনে পড়েছে সরস্বতী পূজা। পরপর তিন দিনের উৎসব। অবশ্য ঢাকায় এখন অন্য বসন্ত। অনেকে একে বাংলা বসন্ত বলে ডাকছেন আরব বসন্তের অনুকরণে। শাহবাগের প্রতিবাদে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস সব ম্লান হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের চোখও এখন শাহবাগে। তরুণরাও সেখানে। ফলে, আলাদা করে পালন করার অবকাশ না রেখে প্রতিবাদের মেলবন্ধনেই সব পালিত হচ্ছে। এবার অবশ্য ভ্যালেন্টাইস ডে একটু ভিন্নমাত্রায় পালিত হওয়ার কথা ছিল। ১৫ তারিখের বিদেশি সব পত্রপত্রিকা জুড়ে ওয়ান বিলিয়ন রাইজিংয়ের সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। পাশের দেশ ভারত-শ্রীলংকাতেও ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং পালিত হলো দারুণ উৎসাহে। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে জমজমাট আয়োজনের তেমন ছবি চোখে পড়ল না। যা হলো তাকে রুটিন কর্মসূচির বাইরে কিছু বলা যায় কি-না, সে প্রশ্নও থাকল। অথচ এ আন্দোলনের উদ্যোক্তা ঈভ এন্সলার ক্যাম্পেইন নিয়ে ঢাকা ঘুরে গেছেন গত মাসেই। ঈভ ও তার সহকর্মীরা দাবি তুলেছিলেন, এবারের ভ্যালেন্টাইন ডে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হোক। শুধু ফুল, ক্যান্ডি আর উপহার নয়। বিশ্বব্যাপী নারীর ওপর যে নির্যাতন চলছে , তার বিরুদ্ধে পথে নামুক এক বিলিয়ন মানুষ। ভালোবাসা জানানোর সঙ্গে পুরুষরা কথা দিক_ নারীর পাশে থাকবে। নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। প্রস্তাবটা দারুণ। আমাদের নারী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এ প্রস্তাব নিয়ে শাহবাগে গেলে সাড়া নিশ্চয়ই পড়ত। কিন্তু তেমন হলো না। অবাক হয়ে দেখছিলাম, বিশ্বব্যাপী ওয়ান বিলিয়ন রাইজিংয়ের কর্মসূচি। বিপুল উৎসাহে নেচে-গেয়ে সমবেত হয়ে নারীরা পালন করছেন ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং। নারীদের সঙ্গে মিলে পুরুষরাও একত্র হয়েছেন। এমন ভালোবাসা দিবসই তো দরকার। এমনিতেই ভালোবাসা দিবস যার যার কাছে তার তার মতো। কারওটা কারও সঙ্গে মেলে না। কেউ হয়তো ভালোবাসা বলতে বোঝেন নর-নারীর সম্পর্ককে। কেউ সেটিকে পারিবারিক, সামাজিক এমনকি দেশের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে সম্পর্কিত করেন। ফলে, একেক বছর যদি একেকভাবে দিবস পালনের প্রস্তাব আসে, মন্দ হয় না। অন্তত, গতানুগতিকতার বাইরে অন্য তাৎপর্য তৈরি হয় তাতে। গতানুগতিকতা কী? যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক ম্যাগাজিন যে তথ্য দিয়েছে, তা শিউরে ওঠার মতো। তারা জানাচ্ছে, এ বছর ভ্যালেন্টাইন ডেতে শুধু আমেরিকাতেই খরচা হয়েছে কুড়ি বিলিয়ন ডলার। এ খরচার বড় অংশ গেছে বাইরে খেতে গিয়ে। প্রায় সাড়ে নয় বিলিয়ন ডলার। বাকি খরচ গেছে কার্ড, ক্যান্ডি, ফুল, পোশাক, অলঙ্কার ইত্যাদি খাতে। খরচাটা দিন দিন বাড়তির দিকে গড়াচ্ছে। আমাদের দেশে কী হচ্ছে, সে হিসাব আপাতত নেই। কখনও হবে_ এমন আশাও নেই। তবে, আমেরিকার হিসাব দেখে কিছু অনুমান করে নেওয়া চলে। কিন্তু অনুমানে কি পুরো তুষ্টি আসবে? অনুমান না পোষালে অবশ্য আমরা একটা হাজারো, লাখো বা কোটি শব্দ জুড়ে দিতে পারি। আপত্তি নেই তাতে কারও। সঠিক পরিসংখ্যান যখন
নেই, তখন তো অনুমানেই কাজ চালাতে হয়।
নেই, তখন তো অনুমানেই কাজ চালাতে হয়।
Subscribe to:
Posts (Atom)