অবশেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও মুখ খুললেন। তিনি বললেন,
ভারত যদি লন্ডন অলিম্পিক বর্জন করে তবে সেটা হবে দুঃখজনক ঘটনা। ভুপাল গ্যাস
ট্র্যাজেডিতে আহত ও নিহতদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করলেও তিনি মনে করেন,
অলিম্পিক বর্জন সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। লন্ডন অলিম্পিকের আর বেশি দেরি নেই।
২৭ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বড় এ আসর।
বরাবরের মতো ভারতও এ আসরে অংশ নেবে সেটাই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। গত
অলিম্পিকে ভারতের সাফল্যও ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এবার ভারত অলিম্পিক
বর্জনের আভাস দিয়ে চলেছে ক্রমাগত। অলিম্পিক নিয়ে ভারতের অস্বস্তির কারণ
অলিম্পিকের এক স্পন্সর নিয়ে। সাধারণ নিয়মে অলিম্পিকে স্পন্সর থাকে। এবার
স্পন্সরদের মাধ্যমে দুই বিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহের টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
স্পন্সরদের মধ্যে আছে এসার, কোকাকোলা, ম্যাকডোনাল্ডস, প্যানাসনিক, জেনারেল
ইলেকট্রিকের মতো নামিদামি কোম্পানি। সঙ্গে আছে বিখ্যাত রাসায়নিক কোম্পানি
ডো কেমিক্যালসও। আর গোল বেঁধেছে এই ডোকে নিয়েই। ডো কেমিক্যালস অবশ্য সরাসরি
জড়িত নয় ভুপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির সঙ্গে। দায়ী ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া
লিমিডেট। ১৯৮৪ সালের ২ ও ৩ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ভূপালের একটি কারখানা
থেকে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসাইনেট গ্যাস নিঃসরণের ফলে তিন হাজার ৭৮৭ জন মানুষ
মারা যান। তাৎক্ষণিক মৃত্যু দুই হাজার ২৫৯ জন। আট হাজার মানুষ মারা গেছেন
গ্যাসজনিত নানা রোগে। আরও লাখ লাখ মানুষ গ্যাসের কারণে শারীরিক ক্ষতির
সম্মুখীন হয়েছে। ডো কেমিক্যালের সঙ্গে ইউনিয়ন কার্বাইড করপোরেশনের তখন
সম্পর্ক না থাকলেও ২০০১ সালে ইউনিয়ন কার্বাইড কিনে নেয় ডো। ফলে ইউনিয়ন
কার্বাইডের দায় এখন মার্কিন কোম্পানি ডোর। ইউনিয়ন কার্বাইডের পূর্ণ দখল
নিলেও ডো এখনও ভুপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের
ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে ডোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে ভূপালের
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা। তারাই প্রথম দাবি তুলেছে, ডো যদি অলিম্পিকে থাকে তো
ভারত যেন অলিম্পিকে না যায়। এখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষও সরব হয়েছে। নানা
দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর তারা অলিম্পিক বর্জনের আভাস দিয়েছে। ভারতের দাবির
সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিসর থেকেও সমর্থন মিলেছে। মানবাধিকার কর্মীরা ভূপালের
মানুষের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। ডো অবশ্য বলছে, তারা তাদের সাবসিডিয়ারি
কোম্পানির কৃতকর্মের দায় নিতে প্রস্তুত নয়। লন্ডন অলিম্পিকের অর্গানাইজিং
কমিটিও বলেছে, ডোর ব্যাপক সুনাম আছে। অতএব একে স্পন্সর তালিকা থেকে সরিয়ে
দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ডোর ইতিহাস অবশ্য বলছে অন্য কথা, তাদের কিনে নেওয়া
মার্কিন কোম্পানিটি ভুপাল ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী আর তাদের বিরুদ্ধেও আছে
ডাই-অক্সিন নিঃসরণের অভিযোগ। ভিয়েতনামে ব্যবহৃত কুখ্যাত নাপাম বোমা
প্রস্তুতকারক হিসেবেও যথেষ্ট দুর্নাম কামিয়েছে তারা। আণবিক বোমা তৈরির কাজও
তারা পেয়েছে। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া হয় ডো ধোয়া তুলসী পাতা, তবু তো
কিনে নেওয়া কোম্পানির কৃতকর্মের দায় তাদের নিতেই হবে। ভূপালের মানুষকে
ক্ষতিপূরণ দিতে সমস্যা কোথায়? ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডো নামি
কোম্পানি। আর অলিম্পিককে শিল্প কারখানা ও রাজনৈতিক উদ্দেশের সঙ্গে জড়িয়ে
ফেলা ঠিক হবে না। তার আহ্বান হলো, ভারত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির
সঙ্গে কথা বলুক। কিন্তু বর্জন যেন না করে। ভারত এখন কী করে সেটাই দেখার
বিষয়। একদিকে মহাশক্তিধর ট্রান্সন্যাশনাল, আরেকদিকে নিজের দেশে
ক্ষতিগ্রস্ত, নিঃস্ব, নিরন্ন মানুষের স্বার্থ। রাষ্ট্র কোন দিকে যাবে?
No comments:
Post a Comment