বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে, রবার্ট লুই স্টিভেনশনের
'ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইডের অদ্ভুত ঘটনা' উপন্যাসের কথা মনে হতে পারে।
এই উপন্যাসের বিষয় এক ব্যক্তির মধ্যেই পরস্পরবিরোধী ব্যক্তিত্বের অবস্থিতি।
কোনো এক ওষুধের কারণে ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইড নামে দুই ধরনের ব্যক্তির
বিকাশ ঘটে একই ব্যক্তির মধ্যে। এই উপন্যাসের সূত্রেই কোনো ব্যক্তির মধ্যে
প্রবল পরস্পরবিরোধী উপাদান থাকলে ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইডের উদাহরণ আসে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইডের উদ্ভব কোন ওষুধে ঘটেছে
তা নিশ্চয় অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলতে পারবেন। তবে পরস্পরবিরোধী কোনো অসুখ যে
রাজনীতি বহন করছে তাতে সন্দেহ নেই। উদাহরণ হিসেবে মঙ্গলবারের পত্রিকা আদর্শ
হতে পারে। এদিনের একটি খবরে দেখা যাচ্ছে, ১২ মার্চের পাল্টাপাল্টি
কর্মসূচি নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল রীতিমতো মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
বিরোধী দল ১২ মার্চ ব্যাপক লোক সমাগম করে সরকারকে একটি মেসেজ দিতে চায়। আর
সরকার দলও এদিন সর্বশক্তি নিয়ে হাজির থাকতে চায় মাঠে। ১২ মার্চের কর্মসূচি
নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধী দলের রীতিমতো বাক ও কর্মসূচি যুদ্ধ চলছে। খবর পড়ে
মনে হবে, দেশ অনিবার্য সংঘাতের মুখোমুখি। বিরোধী দল একের পর এক কর্মসূচি
দিয়ে চলেছে, সরকারও সেগুলো বানচালের জন্য তৎপর। যেন রাজনীতির সেই ঢিল ও
পাটকেল পর্ব শুরু হয়ে গেল। এমন পরিস্থিতিতে যে কেউ উদ্বিগ্নবোধ করবেন।
কিন্তু উদ্বেগ পরক্ষণেই কনফিউশনে পরিণত হবে, যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে
সরকার ও বিরোধী দলের মনোভাব নিয়ে খবরটি কেউ পড়েন। দেখা যাচ্ছে,
তত্ত্বাবধায়কের বিকল্প হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে বিরোধীদলীয়
নেত্রীর একটি মন্তব্যকে ঘিরে রাজনীতিতে সুবাতাস বইছে। সরকারের
কর্তাব্যক্তিরা একে স্বাগত জানাচ্ছেন। এ খবর পড়লে মনে হবে, দেশের রাজনীতিতে
শাসক দলগুলোর মূল বিবাদের মীমাংসা আসন্ন। তত্ত্বাবধায়কের বদলে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চালু হবে। অপেক্ষা শুধু সংসদে বিল উঠবার। তর্ক চলছে
কে বিল ওঠাবে? সরকার না বিরোধী দল? সরকার বলছে, বিরোধীরা ওঠাক, বিরোধীরা
বলছে সরকার ওঠাক। মধুর এই বিতর্কের শেষে হয়তো দেখা যাবে সমস্বরে সবাই বিল
ওঠাচ্ছেন আর তা পাসও হয়ে যাচ্ছে। তারপর সবাই মিলে সুখে-শান্তিতে বসবাস করা
শুরু হচ্ছে। আসলেই কি তাই? বিবদমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান নিশ্চয় সংসদে
এমন একটি আলোচনার ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু সে আলোচনা কি এখনই হবে? রাজপথে
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ যেভাবে মারমুখী আচরণ করছে তাতে এটা নিশ্চিত যে,
বিনাযুদ্ধে কেউ কাউকে সূচ্যগ্র মেদিনী ছাড়বে না। সরকার দেখবে, রাজপথে
বিরোধীরা কতটা শক্তি দেখাতে পারে। আর বিরোধীরা তড়িঘড়ি বাধ্য করাতে চাইবে
সরকারকে। রাজনৈতিক দলগুলো এখন দুটি চেহারা নিয়েই মাঠে। এক চেহারা ডক্টর
জেকিলের, আরেক চেহারা মিস্টার হাইডের। এক চেহারা কর্মসূচি ও পাল্টা
কর্মসূচি দিয়ে চলেছে। আরেক চেহারা আলোচনা-সংলাপ করছে। এর শেষ কোথায় কে
জানে? তবে সাধারণের চিন্তাটা খুব স্পষ্ট সাধারণ মানুষ মনে করে, রাজপথ গরম
না করে আলোচনার টেবিলেই বসা উচিত। শেষ পর্যন্ত তো আলোচনার টেবিলেই বসতে
হবে। তবে আর দেরি কেন? কেন বৃথা পরিশ্রম, সংঘাত ও রক্তক্ষয়?
No comments:
Post a Comment