Thursday, October 21, 2010
বিত্ত সাধনায় বাঙালির অগ্রযাত্রা দেখতে চাই :শংকর
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক শংকর এখন ঢাকায়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) আমন্ত্রণে ছয় দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল তিনি তার বিখ্যাত উপন্যাস 'চৌরঙ্গী' রচনার প্রেক্ষাপটসহ লেখালেখি ও জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এবারই প্রথম বাংলাদেশে এলেন শংকর। পুরো নাম মনিশংকর মুখার্জি হলেও কয়েক প্রজন্মের বাঙালি পাঠকের কাছে তিনি প্রিয় লেখক শংকর নামে পরিচিত। সমকালকে জানান, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে গেছেন অনেকবার, বিমানবন্দরে নেমেছেন; কিন্তু লেখক হিসেবে বাংলাদেশে আসা এই প্রথম। দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, দেশ পত্রিকায় 'কত অজানারে' প্রকাশ শুরু হওয়ার পর সেই ১৯৫৫ সালেই তার বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) আসার কথা ছিল। কিন্তু লেগে গেল আরও ৫৫টি বছর। কারণ হিসেবে দায়ী করলেন ভাগ্যের বিড়ম্বনাকে। জিজ্ঞেস করা হলো, লোকে
আপনাকে বই বিপণনের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করে। আপনি কয়েক প্রজন্মের লাখো পাঠকের কাছে কীভাবে পেঁৗছলেন? তিনি বললেন, পাঠক ভালোবেসে বই পড়েছে। কেন পড়েছে সে কথা কী আমি জানি? যারা বিপণনের পথিকৃৎ বলে তারা হয়তো আমার সাহিত্যের কাটতির দিকে ইঙ্গিত করে। তারা তো আমাকে সাহিত্যিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। এখন ইংরেজরা আমার মূল্যায়ন করছে বলে তাদের আগ্রহও বেড়েছে।
প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভক্ত-পাঠকরা তাকে প্রশ্ন করলে স্বভাবসুলভ শান্তভঙ্গিতে হাস্যরসের মধ্য দিয়ে তিনি উত্তর দেন। পাঠকদের প্রশ্নের উত্তরে শংকর বলেন, 'বাঙালি সর্বত্রই বিত্তের সাধনায় পিছিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের কথা জানি না, তবে পশ্চিমবঙ্গে তারা পিছিয়ে পড়েছে। আমি বিত্তসাধনায় বাঙালির জয়যাত্রা দেখতে চাই।' তিনি লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, সেখানে গিয়ে তিনি বাংলাদেশিদের পরিচালিত রেস্টুরেন্ট দেখতে গিয়েছিলেন। তার মতে, আজ যে চিকেন টিক্কা মাসালা ইংল্যান্ডের জাতীয় ডিশে পরিণত হয়েছে এটি ইংরেজের ওপর আমাদের মধুর প্রতিশোধ। আর এ প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার শুধু বাঙালির আছে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আইইউবির স্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই লেখককে স্বাগত জানান অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা খান। সম্মানসূচক 'উত্তরীয়' পরিয়ে দেন আইইউবির উপাচার্য অধ্যাপক বজলুল মোবিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ফারুক চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ফারুক সোবহান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর প্রমুখ। প্রশ্নোত্তর শেষে যখন অটোগ্রাফ নেওয়ার পালা এলো তখন পিছিয়ে ছিলেন না বিশিষ্ট অতিথিরাও।
১৯৩৩ সালে যশোরের বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আইনজীবী বাবা হরিপদ মুখোপাধ্যায় ভাগ্যের সন্ধানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর আগেই হাওড়ায় চলে আসেন। সেখানেই বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা এবং সাহিত্য-সাধনার শুরু। জীবনের শুরুতে টাইপিস্ট, ক্লার্কসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন। এক ইংরেজের অনুপ্রেরণায় লেখালেখি শুরু করেন। প্রথম বই বের হওয়ার সময় তার বয়স ছিল আঠারো। বয়স কম বলে প্রকাশকের পরামর্শে লোকের সামনে লেখক পরিচয় দিতেন না। প্রকাশক বলেছিলেন, চেহারায় নয়, গল্পের মাধ্যমেই পাঠক তাকে চিনবে।
শংকরের বিখ্যাত উপন্যাস 'চৌরঙ্গী' নিয়ে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত সিনেমা। সত্যজিৎ রায় তারই কাহিনী অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন 'জন অরণ্য' ও 'সীমাবদ্ধে'র মতো চলচ্চিত্র। ইংরেজি ভাষায় তার বিখ্যাত বইগুলো অনুবাদ হতে শুরু করেছে সম্প্রতি। শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনের সাহিত্যিক রূপায়ণে তাকে পথিকৃৎ হিসেবে উল্লেখ করেন সমালোচকরা। কেন শহুরে জীবন তার লেখার বিষয় হলো? এ প্রশ্নের উত্তরে শংকর অসঙ্কোচে জানান, আর কিছু যে জানি না। ওই জীবনও যে ভালো করে জানি সেও বলতে পারি না।
স্বভাবে ভীষণ বিনয়ী, মার্জিত ও নিরহঙ্কারী লেখক বললেন, লেখকের মধ্যে আত্মপ্রসাদ সৃষ্টি হলে তার বিষময় ফল তৈরি হয়। লেখক শংকর ২৪ অক্টোবর সকালে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment