আমাদের কবি একদা লিখেছিলেন, 'বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।' পৃথিবীকে
সত্যিই কতটুকু জানা হয়েছে মানুষের? দেশে দেশে কত নগর, কত রাজধানী অলক্ষ্যে
পড়ে রয়েছে। অনাস্বাদিত, অশ্রুত ও অদৃষ্ট সেসব নগর-বন্দর-রাজধানীকে জানার
নিরন্তর প্রক্রিয়া চলছে। আজ অনেকেই বলেন, হাতের মুঠোয় এসে গেছে পৃথিবী।
ধারণাগত দিক থেকে হাতের মুঠোয় এলেও বাস্তবে কিন্তু পৃথিবীতে জানা ও বোঝার
জন্য জ্ঞান এবং তথ্য আহরণের প্রচেষ্টা চলছে নিরন্তর। শুধু পৃথিবী নয়, জানার
প্রক্রিয়া পৃথিবীর বাইরে বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত। পৃথিবীকে যদি কবির
ভাষায় বলতে হয় বিপুলা, তবে পৃথিবীর বাইরের পুরো বিশ্বজগৎকে বলতে হবে মহা
মহা বিপুলা। কত নক্ষত্র, কত গ্রহ, কত ছায়াপথ সেখানে। আমাদের আরেক কবি
লিখেছিলেন, "মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি/চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ভূলোক
দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/খোদার আসন 'আরশ' ছেদিয়া,/উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি
বিশ্ববিধাতৃর।" বিশ্ববিধাতৃর বিস্ময় উৎপাদনের মতো পদক্ষেপ এখন মানুষের
আয়ত্তে আসেনি। মানুষের পদধূলি সৌর জগতের বাইরে এখনও পড়েনি। কিন্তু
দূরবীক্ষণের সাহচর্য নিয়ে মানুষের চোখ চলে গেছে অনেক দূর কোটি আলোকবর্ষেরও
ওপারে। মহাবিশ্বজুড়ে মানুষ খুঁজে চলেছে অনেক কিছু। দেখে চলেছে যা দেখা যায়।
কিন্তু অনুসন্ধানী মানুষের প্রথম ও প্রধান প্রশ্ন শুরুতে যা ছিল এখনও
তা-ই। মহাবিশ্বে কি পৃথিবী একটাই, বুদ্ধিমান প্রাণী বলতে কি মানুষই
একমাত্র? এ প্রশ্নে পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ নয় শুধু, পৃথিবী হলো
উপযুক্ত তাপ, চাপ, জলবায়ুর সমন্বয়ে গঠিত প্রাণধারণ উপযোগী গ্রহ। পৃথিবীতে
বসে আরেক পৃথিবীকে খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাণের সামান্যতম সম্ভাবনা
কোথাও দেখা দিলে সমস্বরে ঘোষণা করছেন, হ্যাঁ মঙ্গলে মিললেও মিলতে পারে
প্রাণ। বা অন্য কোথাও_ অন্য কোনোখানে। কিন্তু মানুষের নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে
পারে এমন তথ্য এখনও মেলেনি। সবার বিশ্বাস উৎপাদন করতে পারে এমন কথা এখনও
কেউ বলেনি। তবু এবার আশা একটু বেশি। নাসার বিজ্ঞানীরা এবার একটু
ভেবেচিন্তে, অপেক্ষা করে ঘোষণা দিলেন। বললেন, আছে আরেক পৃথিবী। আমাদের
পৃথিবীর বোন। তার নাম কেপলার-বি২২। আমাদের গ্রহ থেকে দুই কোটি বিশ লাখ
আলোকবর্ষ দূরে। অনেক দূরের সেই গ্রহ আমাদের পৃথিবীর মতোই আরেক সূর্যকে
কেন্দ্র করে ঘুরছে। সেখানেও দিন হচ্ছে, রাত হচ্ছে। তবে সেখানে কি প্রাণ
আছে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর মতো অনুকূল তাপ আছে সেখানে। যুক্তি
মোতাবেক, প্রাণ থাকার কথা। প্রাণ যদি থাকে তবে বিবর্তনের পথ ধরে সে প্রাণ
কি মানুষের মতো বুদ্ধি সঞ্চয় করেছে? এখনও কেউ জানে না। তবে নাসার
বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। তবে কি মানুষের সীমাহীন নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে যাচ্ছে
কেপলার-বি২২? হয়তো। আরও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ যদি জানতে পারে যে
সেখানে প্রাণ আছে; তবে পৃথিবীর সন্তানদের সঙ্গে কেপলার বি২২-এর সন্তানদের
দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? ধরা যাক, সেখানে সভ্যতার পর সভ্যতা ধ্বংস হয়ে
বুদ্ধিমান প্রাণীরা এখন উন্নতির শীর্ষে অবস্থান করছে। নয়তো, তারা আছে আদিম
কোনো অবস্থানে। বিকশিত হতে হতে একদিন উন্নতির শীর্ষে উঠবে। আবিষ্কার করবে
প্রযুক্তি। দূরবীক্ষণে তাকিয়ে দেখবে আকাশ, নক্ষত্রলোক। আমাদের পৃথিবীর দিকে
তাকিয়ে খুব অবাক হবে। ভাববে, এখানে আছে প্রাণের সম্ভাবনা। মহাবিশ্বে তারা
আর একা নয়। কিন্তু তারা কি আরেক গ্রহের প্রাণের সন্ধানে যাত্রা করবে? দুই
কোটি ২০ লাখ বছর পর এসে পেঁৗছাবে? অথবা আমাদের পৃথিবী থেকে বিজ্ঞানীরা কি
রওনা হবেন সুদূর ভবিষ্যতের কোনো একদিন সেই পৃথিবীর উদ্দেশে? প্রযুক্তি এখনও
সে শক্তি অর্জন করেনি। আপাতত তাই কবির কথা দিয়ে শেষ করি, 'আমরা দুজন একটি
গাঁয়ে থাকি/সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ।' বিশ্বজগতে পৃথিবীর মতোই আরেক গ্রহ
আছে, আপাতত এই আমাদের সুখের খবর।
No comments:
Post a Comment