Saturday, July 23, 2011

ভারতের সেরা রফতানি


ভারতের সেরা রফতানি পণ্য কী? অনেকেই অনেক পণ্যের কথা বলতে পারেন, কিন্তু 'টাইম' ম্যাগাজিনের একটি লেখায় কার্লা পাওয়ার বলছেন 'সিইও'। সুলিখিত ও সাবলীল এ রচনায় কার্লা যে পণ্যের কথা বলছেন তা মোটেও পণ্য নয়, বরং পণ্য বিক্রির কারিগর_ সিইও বা চিফ মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ। বিশ্বজুড়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে ভারতীয় সিইওদের একচ্ছত্র দাপট এখন। এই সিইওদের দু'জন বঙ্গ ব্রাদার্স। বিন্দি বঙ্গ ছিলেন ইউনিলিভারের শীর্ষ কর্মকর্তা, পরে হয়েছেন ক্লেটন, ডাবিলিয়ার অ্যান্ড রাইসের অংশীদার। আর তার ছোট ভাই ছিলেন সিটি গ্রুপের এশীয় প্রধান, পরে হয়েছেন মাস্টারকার্ডের সিইও। এই বাঘা সিইওদ্বয়ের জন্ম এক মায়ের পেটে। টাইম ম্যাগাজিন প্রশ্ন করেছে, বঙ্গভ্রাতাদের মা তাদের কোন দোকানের চাল খাওয়াতেন যে, তারা কোনো পশ্চিমা ডিগ্রি ছাড়াই এমন অবস্থানে যেতে পারলেন? বঙ্গ ভাইরা বলেন, তাদের মা ছিলেন বাঙালি বাঘিনী। আর বাবা ছিলেন ভারতীয় আর্মিতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল। বাবার বদলির চাকরিবলে নতুন জায়গায় নতুন বল্পুব্দ, নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বড় হয়েছেন তারা। শুধু বঙ্গ ভাইরাই নন, সিটি গ্রুপের বিক্রম পণ্ডিত, পেপসিকোর ইন্দ্র নুয়ি, মটোরোলার সঞ্জয় ঝাঁ, হাথাওয়ের অজিৎ জৈন, ইনসিডের ডিন দীপক জৈনসহ বহু নামই এখন বিশ্ববাজারে সমীহেরু সঙ্গে উচ্চারিত হয়। দিন দিন বিশ্ববাজারে ভারতীয়দের দাপট বাড়ছে। কিন্তু এর পেছনের কাহিনীটা কী? চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এমনকি আমেরিকায়ও প্রশ্নটা ওঠে অহরহ। ভারতীয়রা কেন এ কাজগুলো পাচ্ছে?
প্রথমত, এ এক্সিকিউটিভরা এমন এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন যে, আজকের বিশ্ববাজারের জন্য তারা উপযুক্ত। দ্বিতীয়ত, ভারতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা একজন এক্সিকিউটিভের জন্য বাইরের বাজার-সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে ওঠা সহজ। তৃতীয়ত, জটিল প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতির সঙ্গে তাদের পরিচিতি। চতৃর্থত, কম সম্পদের উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকবলে ভারতীয়রা এখানকার পরিস্থিতি বোঝেন। পঞ্চমত, বিশ্ববাজারের ভাষা ইংরেজিতে কথা বলেন তারা। ষষ্ঠত, এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বাজারের সঙ্গে ভারতীয়দের সুপরিচিতি। সপ্তমত, চীন ও ভারত মাল্টিন্যাশনালদের কাছে মুনাফার অভয়ারণ্য। ফলে, আগামী দিনের গ্গ্নোবাল লিডাররা তাদের মধ্য থেকে আসবে, সেটাই স্বাভাবিক।
ভারতীয়দের আরও নানা গুণের কথা কার্লাকে বলেছেন জিল অ্যাডের নামে এক সিইও। যেমন ভারতীয়রা এশিয়ায় সবচেয়ে পরিচিত মুখ। তারা ইংরেজিতে চিন্তা করে। নিজ দেশের বহুজাতীয় সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। মানিয়ে নিতে পারদর্শী এবং ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। মোগল থেকে ব্রিটিশ_ সব ঔপনিবেশিক শক্তির সংস্কৃতি আত্মস্থ করে ভারত এক মহাশক্তি হয়ে উঠেছে। ভারতীয়রা গুণী, কিন্তু ভারতীয় সিইওদের তৈরি গুণকে সম্পদে পরিণত করছে কারা? সিগনে স্পেনসার নামে এক লেখক বলছেন, ভারতের লোকজন হার্ভার্ড বা এমআইটির চেয়ে তাদের আইআইটি বা আইআইএম বেশি পছন্দ করে। ছোটবেলা থেকেই ছাত্রদের মধ্যে শক্ত প্রস্তুতি ও প্রতিযোগিতা চলে এগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য। আইআইটি হলো ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। আর আইআইএম হলো ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট। দেশের নানা জায়গায় ছড়ানো এ প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। ছাতাধরা ভবনে ক্লাস হয়, চিপা রুমে ঘুমাতে হয়। তবু ছাত্ররা গ্গ্নোবাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে; বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াও তাদের চমৎকার। ৬০ বছর বয়সেও কোন ক্লাসে কে কত নম্বর পেয়েছিল তা তাদের মনে থাকে।
মজার ব্যাপার হলো, ভারত এই বিজনেস এক্সপার্টদের তৈরি করছে। কিন্তু তারা দেশের বদলে দেশের বাইরেই বেশি কাজ করতে পছন্দ করছেন। একজন চীনা এক্সিকিউটিভকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনে কাজ করতে যাবেন কি-না। তখন পার্টির মারফত নিয়োগ পাওয়া এক্সিকিউটিভ প্রশ্ন করবেন, কেন যাব? কিন্তু ভারতীয়রা একপায়ে খাড়া। ভারতে একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিতে বা একটি কারখানা তৈরি করতে একজন সিইওকে ৮০ জায়গায় পারমিশন নিতে হয়। সেখানে চীনে একটি কারখানা বসাতে দুই বা তিন জায়গায় অনুমতি নিলেই চলে। নতুন উদ্যোগের জন্য চীনারা লাল গালিচা পেতে দেয়, আর ভারতীয়রা উদ্যোগটাকে লালফিতায় আটকে ফেলে। দেশের এ পরিস্থিতি ভারতীয় এক্সিকিউটিভদের বিদেশমুখী করছে। বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠছে ভারতীয় সিইওদের স্বর্গরাজ্য।

Friday, July 22, 2011

মিডিয়া মোগল


প্রতিশব্দ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় ভাষার কিছু শব্দ ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত হয়। যেমন পণ্ডিত। বিদ্বান ব্যক্তিকে পণ্ডিত বলে আখ্যায়িত করার রেওয়াজ আছে। তেমনি মোগল আরেক ভারতীয় শব্দ। মিডিয়া মোগল কথাটা বেশ পরিচিত। মিডিয়া সম্রাট অর্থে মিডিয়া মোগল কথাটার ব্যবহার। সম্রাট শব্দটা আমাদের মিডিয়ায়ও আকসার ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি নাম হিসেবেও সম্রাট জনপ্রিয়। কিন্তু মোগল বলে সাধারণত কাউকে আখ্যায়িত করা হয়। এখানে মোগল বলতে মোগল সম্রাটদেরই বোঝানো হয়। একটা প্রবাদ অবশ্য ব্যতিক্রম_ 'পড়েছি মোগলের হাতে_ খানা খেতে হবে সাথে।' এই প্রবাদে সাধারণ অথচ খাদ্যরসিক ব্যক্তিকে মোগল বলতে দেখা যায়। এর বাইরে সাধারণত কাউকে মোগল বলা হয় না। সম্প্রতি মিডিয়া মোগল কথাটা বেশ আলোচিত হচ্ছে একজন মোগলের সূত্রে। রুপার্ট মারডককে অবশ্য শুধু মোগল নয়_ ব্যারন, টাইকুন, বস নানা অভিধায় ডাকা হয়। রুপার্ট মারডক কেমন মোগল তা আমাদের সম্রাটের ধারণা থেকে বোঝা একটু কঠিন। তিনি যে কোম্পানিটির সিইও সেই নিউজ করপোরেশন বিশাল প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় কনগ্গ্নোমারেট। নানা ধরনের, নানা কাজের, নানা কিসিমের প্রতিষ্ঠানের যৌথ রূপ হলো কনগ্গ্নোমারেট। এই প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র প্রকাশ করে, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল চালায়, টিভির জন্য অনুষ্ঠান বানায়, সিনেমা প্রযোজন করে, অ্যালবাম প্রকাশ করে, স্টুডিও পরিচালনা করে, ইন্টারনেটভিত্তিক বাণিজ্যিক উদ্যোগ নেয়। মোটকথা, মিডিয়া বলতে যা বোঝায় তার সব শাখাতেই এর বিস্তার। সহজভাবে বললে, এক নিউজ করপোরেশনের অধীনে কাজ করে শত শত প্রতিষ্ঠান। তারা একজোট হয়ে বিশ্বের মিডিয়া সাম্রাজ্যের বড় একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। রুপার্ট মারডক যে ধরনের ব্যবসায়ী তেমন ব্যবসা বুঝে ওঠাই আমাদের জন্য কঠিন। কেননা এমন ব্যবসার উদাহরণ আমাদের দেশে নেই। মিডিয়া ব্যবসায় করপোরেট উদ্যোগ এ দেশে আছে, কিন্তু কোনো শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী শুধু মিডিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করেছেন এমন উদাহরণ দেওয়া কষ্টকর হবে। ফলে রুপার্ট মারডক আমাদের দেশে খানিকটা ইতিহাসের মোগলদের মতোই। যার কর্মকাণ্ড আমরা আঁচ করতে পারি, কিন্তু পুরো বুঝে ওঠা কঠিন। শত শত পত্রিকা, টিভি চ্যানেলের কর্ণধার সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েডের কারণে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন। নানা প্রশ্নের মুখে রীতিমতো নাকাল হতে হয়েছে তাকে। অভিযোগটা সবার জানা। তার 'নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড' পত্রিকাটি রসাল ও কৌতূহলোদ্দীপক খবরের জন্য পুলিশের সাহায্যে বহু মানুষের ফোন হ্যাক করেছে। অর্থমন্ত্রী, রাজপরিবারের সদস্য, যুদ্ধে নিহত সৈন্য, হত্যার শিকার ব্যক্তি কেউই তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা থেকে বাদ পড়েনি। বহুদিন ধরে চলছিল এই অপকর্ম। পত্রিকাও রসাল আইটেম সমৃদ্ধ হয়ে বাজার মাত করছিল। কিন্তু সহসা ফাঁস হয়ে গেলে পুরনো কাসুন্দি সবার চোখের সামনেই ঘাঁটা হচ্ছে। পুরনো সাংবাদিক, পুলিশ অফিসার, রাজনীতিক থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বহু মানুষ প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড অপরাধ করেছে, অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নাম ইতিমধ্যে বেরিয়ে এসেছে। কারা অপরাধী সে প্রশ্ন নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারও চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো_ এত বড় ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মধ্যে নৈতিকতার অবস্থান কোথায়? শুধু ব্যবসা এবং মুনাফার জন্য যেনতেন প্রকারে সংবাদ সংগ্রহের প্রবণতার মধ্যে দায়িত্ববোধের অবস্থান কোথায়? এ প্রশ্নগুলো আরও কিছু প্রশ্নকে উস্কে দিচ্ছে। সেগুলো হলো মুক্ত সংবাদপত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কি প্রশ্নহীন বা পর্যবেক্ষণহীন থাকা উচিত? আরও একটি প্রশ্ন অবশ্য বাতাসে ঘুরছে। তা হলো, ট্যাবলয়েডের যুগ কি শেষ হয়ে এলো? নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে এ প্রশ্ন উঠছে যে, এমন সংবাদপত্রগুলো ভবিষ্যতে কি গ্রহণযোগ্যতা পাবে? লোকে রসাল খবর পছন্দ করে বটে, কিন্তু রসাল খবরের উৎস যদি বন্ধ হয় তবে পত্রিকা সেগুলো ছাপবে কীভাবে আর মানুষই-বা পড়বে কীভাবে?

Thursday, July 14, 2011

পশ্চিমবঙ্গ


ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদপত্রের খবরে জানা যাচ্ছে, সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত নানা উদ্যোগে সদা ব্যস্ত তিনি। এর মধ্যে বহুদিনের প্রত্যাশিত ও প্রতীক্ষিত নানা উদ্যোগও আছে। এগুলোর কোনোটা হয়তো জনদাবি, কোনোটা হয়তো প্রত্যাশা। কোনোটা হয়তো অনিবার্য, কোনোটা হয়তো ঐচ্ছিক। এমনই এক ঐচ্ছিক প্রসঙ্গ তালিকায় ছিল, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন হবে। তার ঘোষণার পর থেকে সরব হয়ে উঠছেন বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিক মহল। পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন হলে পরিবর্তিত নাম কী হওয়া উচিত তা নিয়ে বেশ বিতর্ক জমে উঠেছে সেখানকার বাংলা পত্রিকাগুলোতে। অনেক রেফারেন্স আসছে। ইংরেজদের ক্যালকাটা নাম পরিবর্তন করে কলকাতা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কলকাতা প্রতিষ্ঠিত নাম। কলকাতা থেকে দূরের মাদ্রাজ চেন্নাই হয়েছে, বোম্বে হয়েছে মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর হয়েছে ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সেই পশ্চিমবঙ্গই রয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পশ্চিমবঙ্গের নাম কেন পরিবর্তন করতে হবে। যুক্তিটা পরিষ্কার। আগে পশ্চিমবঙ্গ ছিল, সেটা সবাই মেনেও নিয়েছিল। কারণ, পূর্ববঙ্গ বলে একটা জায়গার অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু পূর্ববঙ্গ অনেক আগেই বাংলাদেশ হয়ে গেছে। পুরনো সাহিত্যে ছাড়া পূর্ববঙ্গের অস্তিত্ব আজ আর নেই। ফলে পশ্চিমবঙ্গ একা আর বঙ্গের পশ্চিম দিক নির্দেশ করে যাবে কেন? তাই নাম পাল্টানোর দাবি ও আলোচনা বেশ হাওয়া পেয়েছে। মানতেই হবে, বাংলাদেশ নামটা অপূর্ব। ১৯৭১ সালেই যে বাংলাদেশ নামটা তৈরি হয়েছে তা নয়। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায় আমরা বাংলাদেশ বা বাংলা দেশ পাই। বাঙালির পুরো বসতিকেই তখন লেখকরা বাংলাদেশ বলতেন। মনীষীদের বলা সেই নামই আমরা আমাদের দেশকে দিয়েছি, রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সে নামকে প্রতিষ্ঠাও করেছি। চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ নামটি নিতে পারবে না। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম হোক বাংলা। এক দশক আগেও এমন দাবি উঠেছিল। তখন কর্তাব্যক্তিরা দাবিটিকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। কারণ, নীতি অনুসারে ভারতের কোনো রাজ্যের নাম ভাষা অনুসারে হতে পারে না। বাঙালি ছাড়াও অন্য ভাষার লোক সে রাজ্যে বাস করে। ফলে বাংলা নামটি আপাতত হচ্ছে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। কেউ বলছেন, তবে নাম দেওয়া হোক বঙ্গ। অথবা বঙ্গদেশ বা বঙ্গপ্রদেশ। প্রদেশের কথায় কেউ কেউ ফোঁড়ন কাটছেন। বলছেন, নামের কি আকালটাই না পড়েছিল ভারতে। নাম নেই তাই রাজ্যের নাম দেওয়া হয়েছে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ। প্রদেশজুড়ে রাজ্যের নাম দেওয়ার চাইতে বরং শুধু বঙ্গ নামটাই ভালো। কেউ কেউ বঙ্গ শব্দটার সঙ্গে ভারত জুড়ে দিয়ে বঙ্গ-ভারত নাম নেওয়ার পক্ষে বলছেন। তাতে ভারতের সঙ্গে নামটা জুড়ে থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য বলছেন, নাম হোক বঙ্গভূমি। নানা মুনির নানা নাম নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, আলাপ-আলোচনা চলছে। বাংলাদেশে অবশ্য সে আলোচনার ঢেউ সামান্যই পেঁৗছাচ্ছে। কারণ, নাম নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে আমাদের অনেক নিকটবর্তী হলেও রাজনৈতিকভাবে অনেক দূরে। ফলে সেখানকার মাঠে-ময়দানে কী হচ্ছে সেটা এখানে বসে জানা কঠিন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নাম পরিবর্তনের কারণ আমরাই। পূর্ববঙ্গ নেই বলে পশ্চিমবঙ্গ নাম পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। একথা ঠিক যে, পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা তাদের রাজ্যের নাম কী দেবে সে নিয়ে আমাদের মতের গুরুত্ব নেই। আর নামে কী আসে যায়। আমরা শুধু আশা করব, তারা যেন সুন্দর একটি নাম নিয়ে সুপ্রতিবেশী হিসেবে আমাদের পাশে থাকতে পারে।

Thursday, July 7, 2011

গুগল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট


ইন্টারনেটে সবচেয়ে বড় অনুসন্ধান যন্ত্র গুগল, একে বলা হয় সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট। বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটি সাধারণ অভ্যাস হলো, যে কোনো বিষয়ে তথ্য খুঁজতে প্রথমেই গুগল খুলে সার্চ দেওয়া। ব্যবহারকারীদের জানাশোনার মধ্যে প্রচুর ওয়েবসাইটই থাকে। কিন্তু ব্যবহারকারীরা যখন নির্দিষ্ট কোনো তথ্য খোঁজ করেন তখন কোথায় তা থাকতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নির্দিষ্ট সাইটে সার্চ করেন না। তারা সাহায্য নেন সার্চ ইঞ্জিনের। সার্চ ইঞ্জিনগুলো কি ওয়ার্ডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে তার প্রয়োজনীয় তথ্যের কাছে নিয়ে যায় বা তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে তার নির্দেশনা দেয়। এ কাজের জন্য লাখ লাখ ওয়েবসাইট থেকে তথ্য জোগাড় করে সার্চ ইঞ্জিনগুলো। এ কাজে গুগলই সেরা। শুধু সেরা নয়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা গুগলের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে কোনো তথ্য গুগলে না থাকলে সে তথ্য প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। গুগলের এই উপযোগিতার কারণে সাইটটি প্রায় সব দেশেই ট্রাফিক র‌্যাংকিংয়ে এক বা দুই নাম্বারে থাকে। ব্যবহারকারীরা যেমন চায় প্রয়োজনীয় সব তথ্য গুগলের আওতায় থাকুক, তেমনি যারা তথ্য জানাতে ভয় পায় তারাও চায় গুগলে তথ্যটি না থাকুক। ফলে নানা দেশের সরকার গুগলের কাছে নিয়মিত নানা বিষয়ে তথ্য মুছে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠায়। শুধু তথ্য মুছে দেওয়াই নয়, ব্যবহারকারীর তথ্য জানতে চেয়েও চিঠি দেয় সরকারগুলো। ব্যবসার প্রয়োজনে গুগল তথ্য সরবরাহ করে। গুগলের এমন তথ্য সরবরাহের নানা নজির থেকে কেউ কেউ এ সার্চ ইঞ্জিনটিকে স্পাই বলেও অভিযোগ করেন। কিন্তু গুগল বলছে, তথ্য মুছে দেওয়া বা সরবরাহের ক্ষেত্রে তাদের পালনীয় নীতি আছে। সেগুলো মেনেই তারা কাজ চালায়। নানা দেশের নানা আইন বা রীতি, কোনো আদালত যদি কোনো তথ্য মুছে দেওয়ার নির্দেশ দেন, কোনো তথ্য/ছবি/ভিডিও যদি ঘৃণা ছড়ায়, পর্নোগ্রাফিক হয় কিংবা আইনগতভাবে অন্যায্য হয় তবে সে তথ্য মুছে ফেললে কেউ আপত্তি করবেন না। কিন্তু যদি সরকারের অনুরোধে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বঞ্চিত করা হয় তবে আপত্তি থাকার কথা। আর সরকারের অনুরোধে ব্যবহারকারীদের তথ্য পাচার করলে তো সেটি গুরুতর ঘটনা। গুগল এসব করে, কিন্তু এবার তাতে একটু স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে কোম্পানিটি। তারা রীতিমতো একটি ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। কোন দেশ তাদের কাছে কত তথ্য মুছে দেওয়ার অনুরোধ করেছে, কত তথ্য মুছে দেওয়া হয়েছে তার একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। এই তালিকাটি অনেককেই বিস্মিত করবে। কেননা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে এবং গণতান্ত্রিক বলে কথিত দেশগুলোর অবস্থান এ তালিকার শীর্ষে। প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিল, তৃতীয় অবস্থানে ভারত, চতুর্থ অবস্থানে ইংল্যান্ড, পঞ্চম ফ্রান্স, ষষ্ঠ জার্মানি। গুগলের ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট দেশগুলোকে সচেতন করবে বলেই মনে হয়। ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো বা ক্ষতিকর কোনো তথ্য ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো তথ্য বন্ধ করার উদ্যোগ সমর্থন করা যায় না। এক্ষেত্রে গুগলের ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট কাজে আসতে পারে। তবে রিপোর্টটিকে আরও বিস্তারিত হতে হবে। সরকারের কয়টি আবেদন আদালতের নির্দেশে, আর কয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সে কথাগুলো রিপোর্টে উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়ার ধরনগুলোও উল্লেখ করা প্রয়োজন। মজার ব্যাপার, মতপ্রকাশের অধিকার সীমিত এমন দেশ চীন কিন্তু গুগলের কাছে কোনো চিঠি পাঠায়নি। কারণ, চীনে গুগল বন্ধ। মূল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকলেও ট্রাফিক রিপোর্টে আছে। কেননা, ২০০৯ সালের মার্চে বাংলাদেশে চারদিন ইউটিউব বন্ধ ছিল।