Tuesday, May 10, 2011
অসহনীয়!
টিএস এলিয়ট ওয়েস্টল্যান্ড কবিতায় লিখেছিলেন, 'এপ্রিল ইজ দ্য ক্রুয়েলেস্ট মান্থ...' অর্থাৎ নিষ্ঠুরতম মাস এপ্রিল। পাশ্চাত্যে কতটা নিষ্ঠুর ছিল এপ্রিল এলিয়টের কালে তা নিশ্চয়ই আবহাওয়াবিশারদদের গবেষণার বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশে যে এপ্রিল উষ্ণতম তা নির্ভাবনায় বলে দেওয়া যায়। শুধু এপ্রিল কেন, মে-ও কম উষ্ণ নয়। বাংলা মাসের হিসেবে বৈশাখ। বৈশাখ রুদ্র। কালবৈশাখীর জন্যই হয়তো বৈশাখের রুদ্রতা বিশেষ প্রচার পেয়েছে। কিন্তু অসহনীয় গরমের জন্যও কি বৈশাখের প্রচার হয়েছে? জীবনানন্দ দাশ কবিতার মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, একদিন এই পৃথিবীর রোদ ছিল আরও লাল। অতীতের কোনো পৃথিবীতে হয়তো রোদের রঙ লালই ছিল। এখন রোদের রঙ খানিকটা ফিকে হয়ে গেছে। রোদ লালিমা হারিয়েছে বটে কিন্তু বেড়েছে তার তীব্রতা, আঘাতের শক্তি। রোদের রশ্মিতে যুক্ত হয়েছে জানা-অজানা সব অতিবেগুনি উপাদান। রোদের রঙ বদলেছে, রূপ বদলেছে। আর পৃথিবীর উষ্ণায়নের সঙ্গে বেড়েছে গরম। বৈশাখে একটা স্বাভাবিক গরম বহু প্রাচীনকাল থেকেই বঙ্গদেশে পড়ে। শুধু বৈশাখ নয়, জ্যৈষ্ঠ এমনকি ভাদ্র মাসের গরমও বেশ বিখ্যাত। আর এ দেশের গরমের নিত্যসঙ্গী আর্দ্রতা। রোদের নিচে দাঁড়ালেই ঘেমে-নেয়ে ওঠে মানুষ। দেশে এখন রুদ্র বৈশাখের দাবদাহ চলছে। গরম অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গরম বাড়লে শহরে আবশ্যিকভাবে দুটো দুর্বিপাক এসে হাজির হয়। আর্দ্রতা ও উষ্ণতার চেয়ে কম কিছু নয় তারা। প্রথমজন লোডশেডিং, দ্বিতীয়জন ট্রাফিক জ্যাম। গরমে এসি বেশি চলে, ফ্যান বেশি ঘোরে, বিদ্যুৎ ব্যবহার বেড়ে যায়। চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহের বিদ্যুতে লোডশেডিংয়ের একটা যুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু ট্রাফিক জ্যাম? গরম বাড়লে কেন ট্রাফিক জ্যাম বাড়ে তা জানতে নিশ্চয়ই নগরবিশারদদের দ্বারস্থ হতে হবে। উষ্ণতা, আর্দ্রতা, লোডশেডিং, জ্যামের বাইরে গ্রীষ্মের আরেক রূপ আছে। শহরে, গ্রামে প্রচুর ফুল ফোটে। বিশেষ করে কৃষ্ণচূড়া। কৃষ্ণচূড়া ফোটার জন্য ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা লাগে। আর সে তাপমাত্রা বৈশাখে মিলে যায়। বাগানে লালের আগুন লেগে যায়। শহরের রাস্তায় কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি মোহময় এক আবহ তৈরি করে। শুধু কৃষ্ণচূড়া নয়, কনকচূড়া, জারুল, রাধাচূড়া, অলকানন্দা ফুল ফোটে এ সময়। তবে কৃষ্ণচূড়ার আধিপত্যই সর্বত্র বিস্তৃত। শহর সাজানোর জন্য কৃষ্ণচূড়ার বেশ কদর আছে কর্তাদের কাছে। বলা হয়ে থাকে, গাছটি নাকি টিকেই আছে নগর পরিকল্পনাকারীদের আতিথ্যে। এমনিতে বন্য অবস্থায় একে পাওয়া যায় না। কিন্তু শহর সাজাতে কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া, জারুল পরপর লাগানোর একটা রীতি নাগরিকরা রপ্ত করেছেন। কৃষ্ণচূড়া নামটি সহজবোধ্য। হিন্দিতে এ ফুলের নাম গুলমোহর। মানে ময়ূর ফুল। ময়ূরের পেখমের সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনা করতেই এ নাম। ভিয়েতনামে এর নাম ফুঙ ভি। মানে রূপকথার পাখি ফিনিক্সের লেজ। হিন্দি ভাষায় হলুদ কৃষ্ণচূড়াকেও বলা হয় গুলমোহর। আমাদের দেশে এ ফুলের নাম রাধাচূড়া। আমাদের জাতীয় সংসদ ভবনের পার্শ্ববর্তী রাস্তায় কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া অনেকটা পরপর লাগানো। গরমের দিনে লোডশেডিং আর জ্যাম পেরিয়ে ঘামতে ঘামতে কেউ যদি সহসা এসব রাস্তায় পেঁৗছান তবে তার কাছে ফুলের সৌন্দর্য কি বার্তা বয়ে আনবে? তিনি কি বলবেন, সুন্দর। নাকি নিজের অজান্তেই গাছে ফোটা ফুলের অপূর্ব রূপ দেখে এই সৌন্দর্যকেও বলে বসবেন অসহনীয়?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment