ব্রিটিশ রাজপরিবারের পিছু ছাড়ছে না পাপারাৎসি বা পাপারাজ্জি। প্রিন্সেস
ডায়ানার পেছনে কেমনভাবে লেগেছিল নাছোড়বান্দা ফটোগ্রাফাররা, সে স্মৃতি এখনও
মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। ডায়ানা জীবিত থাকাকালে মাঝে মাঝেই
ফটোসাংবাদিকদের গোয়েন্দাবৃত্তির ফলে মিডিয়ায় আসা ছবিগুলো আলোচনা-সমালোচনার
ঝড় তুলত। গোপনে তোলা ব্যক্তিগত এসব ছবি গণমাধ্যমগুলোর পসার কতটা বাড়াতে
পেরেছিল জানা না গেলেও এগুলো যে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল তা
অনেকেই বিশ্বাস করেন। প্যারিসের টানেলে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানার
মৃত্যুর পেছনে পরোক্ষে পাপারাৎসিদের হাত ছিল বলে মনে করা হয়। ডায়ানা
নিঃসন্দেহে রাজপরিবারের সবচেয়ে সেলিব্রেটি নারী। যারা তার থেকে কম
সেলিব্রেটি তাদের নিয়েও ফটোগ্রাফারদের উৎসাহের শেষ নেই। রাজপরিবারের
তরুণ-তরুণীদের নগ্ন-অর্ধনগ্ন ছবি তাই অনলাইনে সহজলভ্য। শুধু রাজপরিবার কেন,
বৈবাহিক সূত্রে রাজপরিবারের আত্মীয় পিপ্পা মিডলটনকে নিয়ে কম তোলপাড় করেনি
ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলো। নানা রকমের ছবি তো খবরের আবশ্যিক অনুষঙ্গ।
পাপারাৎসিদের দৌরাত্ম্য ডায়ানার ছেলেদেরও ছাড়ছে না। ছেলে-বউকে তো না-ই।
কিছুদিন আগে লাস ভেগাসে বেড়াতে গিয়ে প্রিন্সেস ডায়ানার ছোট ছেলে প্রিন্স
হ্যারি বেশ বিপদে পড়েছিলেন। হোটেলে কাটানো ব্যক্তিগত সময়ের বেশকিছু ছবি
পাচার হয়ে যায়। হ্যারির ক্ষেত্রে অবশ্য পাপারাৎসিদের দিকে অভিযোগ ওঠেনি।
কেননা, নাছোড়বান্দা প্রফেশনালরা নন, বরং হ্যারির বন্ধু-বান্ধবদের মধ্য
থেকেই ছবি ছড়িয়েছে। আর এই ছবি বেচে বেশ টুপাইস কামিয়েও নিয়েছেন তিনি।
হ্যারির সেসব ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। নানা আলাপ-আলোচনাও উঠেছে। কিন্তু,
হ্যারি যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেন সেই বাহিনীর তরুণরা তাকে অকুণ্ঠ
সমর্থন দিয়েছেন। আপাতত হ্যারি তাদেরই সনি্নধানে, আফগানিস্তানে। হ্যারির
নগ্ন ছবির ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ফরাসি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কেট
মিডলটন ও প্রিন্স উইলিয়ামের ছবি। তারা ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব ক্যাম্ব্রিজ।
কেট ও উইলিয়াম গিয়েছিলেন ফ্রান্সে_ ব্যক্তিগত ছুটি কাটানোর মানসে। থেকেছেন
শ্যাতো দ্য আউলে নামক এক অবসর কেন্দ্রে। সেখানে তাদের ব্যক্তিগত নানা
মুহূর্তের ছবি বড় লেন্সের সাহায্যে তুলেছেন পাপারাৎসিরা। সেসব ছবি ছাপা
হয়েছে ফরাসি পত্রিকায়। আর এতে স্বভাবতই ডিউক ও ডাচেস তেলেবেগুনে জ্বলে
উঠেছেন। রাজপ্রসাদের তরফে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পত্র-পত্রিকাও ফলাও করে
খবর প্রচার করছে। তবে ফ্রান্সে ঘটা এই ঘটনায় সবাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন
ডায়ানার বিয়োগান্ত ঘটনার কথা। কেননা সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ফলে ঘটনার
গুরুত্ব বেড়ে গেছে। অবশ্য এখানে ফ্রান্স বনাম ব্রিটেন বলে কোনো ব্যাপার
দাঁড়াচ্ছে না। আমাদের অর্থমন্ত্রীর ভাষায় বলতে গেলে, ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলো
কম 'দুষ্টু' নয়। তারা রাজপরিবারকে ছেড়ে কথা কয় না। রাজপরিবার সংশ্লিষ্টদের
নগ্ন ছবির প্রতি তাদের আগ্রহ বিপুল। বরং ফ্রেঞ্চরা ট্যাবলয়েডের ব্যাপারে
নাক সিটকায়। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোর জনপ্রিয়তা বিপুল। এখন প্রশ্ন হলো,
রূপালি পর্দার এত সেলিব্রেটি থাকতে কেন রাজপরিবারের প্রতি ট্যাবলয়েডগুলোর
এই বিশেষ আকর্ষণ? বহু শতাব্দী প্রাচীন, আড়ম্বরপূর্ণ, সম্মানিত ভাবমূর্তির
প্রতি কোনো অবচেতন বিরাগ নেই তো এর মধ্যে? নিশ্চয়ই মনোবিজ্ঞানীরা ভালো বলতে
পারবেন। কিন্তু পাপারাৎসির হাত থেকে মুক্তি নেই রাজপরিবারের। ফলে রাজপুত্র
ও রাজকন্যাদের নিজ দায়িত্বে কাপড় সামলাতে হবে ভবিষ্যতেও। পাপারাৎসি শব্দটা
ইতালিয়ান। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ফেদরিকো ফেলেনির ছবি 'লা দোলচে ভিটা'য়
প্রসঙ্গক্রমে শব্দটি উচ্চারিত হয়। আর এখান থেকেই তা চালু হয়ে গেছে। তবে
গোপনে ছবি তোলার ঘটনা ফেলেনি চালু করেননি। বলাই বাহুল্য।
Wednesday, September 19, 2012
Thursday, September 13, 2012
ইউ পম গানা?
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে বাংলা সিনেমার নায়ক এম এ জলিল
অনন্তকে নিয়ে বিপুল হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত একটি বাংলা
টিভি চ্যানেলে অনন্তর সাক্ষাৎকার থেকে। বিগ বাজেটের সিনেমা করে অনন্ত
আলোচনায় এসেছেন। এর আগে নির্মাণ করেছেন 'খোঁজ_ দ্য সার্চ', সম্প্রতি মুক্তি
পেয়েছে আরেকটি সিনেমা 'মোস্ট ওয়েলকাম'। নায়ক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা শোনাতে
গিয়ে টিভি সাক্ষাৎকারে অনন্ত শোনাচ্ছিলেন তার অভিজ্ঞতার কথা। রাজধানীর
দামি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গিয়ে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন
অনন্ত। সেখানে খেতে আসা উচ্চবিত্তের আধুনিক ছেলে-মেয়েরা অনন্তকে দেখিয়ে
বলেন, ওই দেখ বাংলা সিনেমার নায়ক। বলাবাহুল্য, তাকে দেখেই হাস্যরসের আবহ
সৃষ্টি হয়। অনন্ত হাসিরস হজম না করে তাদের দিকে এগিয়ে যান। তাদের উদ্দেশে
যা বলেন তা মোটামুটি এইরকম_ ইউ পম গানা? ইউ লিভ বাংলাদেশ, ইউ ইট ফুড ইন
বাংলাদেশ, ম্যান ইউ হ্যাভ টু রেসপেক্ট ইন বাংলাদেশ। অনন্ত বলতে চেয়েছেন,
তোমরা কি ঘানা থেকে এসেছো? তোমরা বাংলাদেশে থাকো, এখানকার খাবার খাও।
বাংলাদেশের প্রতি তোমাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। খানিকটা ভুল ও বিচিত্র
ইংরেজি উচ্চারণের কারণে সাক্ষাৎকারটি হাস্যরসের জন্ম দেয়। প্রযুক্তির
কল্যাণে ইউটিউব, ফেসবুক, ব্লগ মারফত ছড়িয়ে যায়। মুখে মুখে ফিরতে থাকে, ইউ
পম গানা? কাউকে পরিহাস করতে এখন হামেশা এই ডায়লগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি
বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে পরিহাস করতে অনন্তের ডায়লগ লেখা
প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। অনন্তকে নিয়ে নানামুখী
আলোচনা চলছে, ফান ম্যাগাজিন-কার্টুনের বিষয় হয়েছেন অনন্ত। সঙ্গে অবশ্য কেউ
কেউ এ প্রশ্নও তুলছেন, এত হাস্যরসের কারণ কী? ভুল ইংরেজিতে কথা বললেই কি
হাসতে হবে? নাকি বাংলা সিনেমার নায়ক বলেই তিনি ভুল বলতে পারবেন না? অবশ্য
বাংলা সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে হাস্যরস তৈরির ঘটনা এই প্রথম নয়।
মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের দর্শকরা সাধারণত সিনেমা হলে এফডিসিতে তৈরি বাংলা
সিনেমা দেখতে যান না। কেন যান না তার কারণ স্পষ্ট। এই ভোক্তাদের দিকে
লক্ষ্য রেখে সিনেমা তৈরি হয় না। ফলে এই শ্রেণীগুলোর সঙ্গে বাংলা সিনেমার এ
ধরনের অপরিচয় ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সে দূরত্ব সত্ত্বেও বাংলা সিনেমার
নায়ক-নায়িকারা জনপ্রিয় হচ্ছেন। গরিব সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে।
সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খারাপ। ব্যবসা কমে যাচ্ছে। তবু সিনেমা তৈরি
হচ্ছে_ গরিবের বিনোদনের জন্য। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের বিনোদনের জগৎ ভিন্ন।
বাংলা সিনেমার প্রতি তাদের প্রত্যাখ্যান সহজাত, হাস্যরসও স্বাভাবিক। বাংলা
সিনেমার নায়করা জোরে কথা বলেন কেন, নায়িকারা এত মোটা হন কেন, এসব প্রশ্ন
ওঠে। সিনেমার নানা গৎবাঁধা ডায়ালগ নিয়েও হাসিঠাট্টা হয়। ফলে অনন্তর প্রতি
এই হাস্যরস নতুন নয়। তবে হাস্যরসের ব্যাপ্তিটা লক্ষ্য করার মতো। বাংলা
সিনেমার প্রতি বিরাগের পাশাপাশি এই হাসির পেছনে আছে ভাষার শুদ্ধতার জন্য এক
ধরনের আহাজারি। বাংলা সিনেমার নায়ক ইংরেজি ডায়লগ কেন দেবে তাও ভুলভাল
ইংরেজিতে? বলাবাহুল্য, ভুল ইংরেজিকে এখানে অন্যতম অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কেউ যদি ভারতীয় লোকসভার অধিবেশন শোনেন, কিংবা ভারতের টিভি চ্যানেলে মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন নেতাদের সাক্ষাৎকার দেখেন তবে বুঝবেন তারা অকপটে
কত ভুলভাল ইংরেজি দিয়ে কাজ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভারতে ইংরেজিকে অস্বীকার
করার উপায় নেই। সেখানে সেটি যোগাযোগের ভাষা। ফলে না জানলেও বলতে হবে, শিখে
নিতে হবে। নতুন প্রজন্মগুলো সেখানে স্বচ্ছন্দে ইংরেজি বলে। শুধু বলে না,
ইংরেজিতে লেখে, পড়েও। পূর্বপ্রজন্মের ভুলভাল ইংরেজির ওপর দাঁড়িয়ে আছে পরের
প্রজন্মের এই স্মার্ট ইংরেজি। বৈশ্বিক কমিউনিকেশনের জন্য আমরাও ইংরেজির ওপর
নির্ভরশীল। কিন্তু নতুন প্রজন্মগুলো এখানে ইংরেজিতে কতটা দক্ষ? যারা
অনন্তকে নিয়ে হাসাহাসি করছেন তাদের সবাই ভালো ইংরেজি বলেন তা তো নয়। কিন্তু
অধিকাংশই ইংরেজি বলতে সংকোচ বোধ করেন, যদি ভুল হয়ে যায়। কিন্তু এক প্রজন্ম
ভুল না বললে পরের প্রজন্ম সঠিক বলবে কী করে?
Subscribe to:
Posts (Atom)